নির্বাচনের আগে বিচারের মুখে ৪৫৩ নেতা-কর্মী

সংসদ নির্বাচনের আগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন চট্টগ্রামের বিএনপি-জামায়াতের সাড়ে চার শ নেতা-কর্মী। মামলার জালে আটকা পড়া নেতাদের মধ্যে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও রয়েছেন। চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় করা এ-সংক্রান্ত মামলাটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে মহানগর হাকিম আদালত থেকে বিচারিক আদালতে পাঠানোর দিন ধার্য হয়েছে।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, অক্টোবর মাসের শেষ দিকে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দলের ৪৫৩ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হতে পারে। এটা নির্বাচনের আগে বিএনপিকে কোণঠাসা করার কৌশল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে (২০১৫ সাল) চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িসংলগ্ন নাসিমন ভবনের সামনে সমাবেশ ডেকেছিল ২০-দলীয় জোট। ওই দিন সভা চলাকালে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি হয় নেতা-কর্মীদের। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আসলাম চৌধুরীসহ ৩০২ জনকে গ্রেপ্তার করে। আসামিদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী এখনো কারাগারে। তাঁর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘বাংলাদেশের সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এজাহারভুক্ত ৩০২ জনসহ ৪৫৩ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিস্ফোরক আইন ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ৪ জুলাই কোতোয়ালি থানার পুলিশ এই অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান এই মামলার তিনটি পৃথক নথি করেন। ফলে আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক, সন্ত্রাসবিরোধী ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক তিন আদালতে বিচার আলাদাভাবে চলবে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর তিনটি নথি তিন আমলি আদালতে (যেখানে বিচার হবে) পাঠানোর আদেশ দেন মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান।

সংঘর্ষের ওই ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম, দলের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহসভাপতি মো. এনামুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম এবং জামায়াতের সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে বিএনপি-জামায়াতের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

একসঙ্গে ৪৫৩ জনকে অভিযুক্ত করা প্রসঙ্গে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি নাসিমন ভবনের সামনে কী ঘটেছে, তা সবাই দেখেছে। কিন্তু চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সক্রিয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তা আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বিএনপির সম্ভাব্য প্রায় সব প্রার্থীর নাম অভিযোগপত্রে রয়েছে। আওয়ামী লীগ আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের আয়োজন করতে বেছে বেছে বিএনপির শীর্ষ এবং সক্রিয় নেতাদের মামলার জালে আটকে দিয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারির ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৩৫৫ জন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। বাকি ১৯৮ জনের মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সহসভাপতি ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুস সাত্তার বলেন, পুলিশ যে ধারা প্রয়োগ করেছে, তা অভিযোগের বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, অভিযোগপত্র যথাযথ পদ্ধতিতে হয়েছে কি না, সেটা আদালত ও প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) দেখবে। অভিযোগপত্রে ত্রুটি আছে কিংবা নেই, তা আগাম বলার সুযোগ নেই।