কত ফুল ফোটে

বুধবার রাতে ফুটছিল নাইট কুইন, রাত সাড়ে আটটায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে
বুধবার রাতে ফুটছিল নাইট কুইন, রাত সাড়ে আটটায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে

পটকা ফুটলে শব্দ হয়, ফুল ফুটলে হয় না। তবে আমাদের শিশুসাহিত্যের রাজাধিরাজ সুকুমার রায় ফুল ফোটার শব্দ নিয়েও লিখেছিলেন অপূর্ব এক ননসেন্স রাইম। ‘ঠাস্‌ ঠাস্‌ দ্রুম্ দ্রাম্‌, শুনে লাগে খটকা/ ফুল ফোটে? তাই বলো, আমি ভাবি পটকা’ (শব্দকল্পদ্রুম)। সুকুমার জানতেন, আমরাও জানি ফুল ফুটলে পটকার মতো শব্দ হয় না। তিনি আসলে ছন্দের এই ঠাস বুননে এক প্রতীকী অর্থ গুঁজে দিয়েছিলেন।

ফুল ফুটলে কিন্তু শব্দ হয়। সেটা অন্য রকম শব্দ, অন্যখানে হয়। যাঁরা পরিচর্যা করে ফুল ফোটান, যাঁরা ফুল ভালোবাসেন, ফুল ফুটলে তাঁদের মনে আনন্দের ঝমঝমানি হয়, বুকের মধ্যে আনন্দরাগিণী ভূপালির আলাপ বাজে। সেই শব্দ তাঁরা স্পষ্টই শুনতে পান। বুধবার রাতে এ রকম ফুল ফোটা দেখতে গিয়েছিলাম খ্যাতিমান বিজ্ঞানী রেজাউর রহমানের ধানমন্ডির বাসায়। তিনি ও তাঁর স্ত্রী উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক হালিমা রহমানের পরিচর্যায় তাঁদের গৃহে গত দুদিনে ফুটেছে ১২টি নাইট কুইন। আমাদের পুষ্পবিশেষজ্ঞরা ফুলটির নাম দিয়েছেন নিশিপদ্ম। কেউ বলেন রাতের রানি। একসময় কোনো বাড়িতে এ ফুল ফুটলে বেশ হইচই হতো। এখন অনেকের ঘরেই এটা ফোটে। ফলে সেই উচ্ছ্বাস আর নেই। তবে যাঁরা ফুল ফোটান, ফোটার প্রতীক্ষায় প্রহর গোনেন, তাঁদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি নেই। সেই সত্যটাই গতকাল উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল এই প্রবীণ দম্পতির চলনে-বলনে, কথা আর আলাপনে। যাকে বলে প্রাণের স্ফূর্তি। মৃদুভাষী বিদগ্ধ এই প্রবীণ বিজ্ঞানী কেমন প্রগলভ হয়ে উঠলেন, বলে গেলেন অপরূপ ফুল নাইট কুইনের জানা-অজানা নানা গল্প, মিথ।

মঙ্গলবার রাতে ফোটা ফুল শুকিয়ে গেল ভোরবেলাতেই
মঙ্গলবার রাতে ফোটা ফুল শুকিয়ে গেল ভোরবেলাতেই

‘ফোটা’ শব্দটার মধ্যেই যেন একটি প্রাণের হিল্লোল আছে। যেমন আকাশে তারা ফোটা, ভোরের আলো ফোটা, শিশুর মুখে বোল ফোটা, হাসি ফোটা। এ রকম নানা ফোটার ভেতর একটা আনন্দরেখা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আবার প্রতীকী ব্যঞ্জনায় বলা যায়, কদিনমাত্র আগে ঢাকার রাজপথে হাজার হাজার কিশোর-কিশোরী ফুল হয়ে ফুটেছিল। সেই ফুলের সুবাস ছড়িয়ে গেল ঘর থেকে ঘরে, মন থেকে মনে। এ রকম ফুল তো নাইট কুইনের মতোই, দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কিন্তু রেখে যায় আলোর দিশা।

অনেক আনকথা হয়ে গেল। এবার নাইট কুইনের পরিচয় বৃত্তান্তের জন্য কিছু কথা বরাদ্দ করা যাক। এটি ক্যাকটাস গোত্রীয় গাছ, মসৃণ ও কাঁটাহীন। পাতা নেই, রূপান্তরিত কাণ্ডই পাতার কাজ করে। অনেক শাখা-প্রশাখা যুক্ত। গ্রীষ্মের শেষভাগে একপশলা বৃষ্টির ছোঁয়া পেলেই সাদা রঙের সুগন্ধি ফুল ফোটে। রাতে ফোটে ভোরেই শুকিয়ে যায়। সাধারণত টবেই চাষ করা হয়। আদি আবাস মেক্সিকো।

আমাদের গ্রহে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ বনে-বাদাড়ে, বাগানে, টবে আদরে-অনাদরে কত অজস্র ফুল ফোটে। তবু একেকটি ফুলের ফুটে ওঠা কতই না রোমাঞ্চকর।