ডিবির ৭ সদস্যের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে

>
  • কক্সবাজার শহর থেকে কম্বল ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ডিবি পুলিশ। 
  • গত বছরের ২৪ অক্টোবর ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়।
  • ‘ক্রসফায়ারের’ হুমকি দিয়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি।
  • মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া ১৭ লাখ টাকা ফেরত পাননি ব্যবসায়ী।

কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাত সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী আবদুল গফুরকে অপহরণের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর চলতি আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ডিবির সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

কম্বল ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার ডিবির সাত সদস্য এখন কক্সবাজারের কারাগারে আছেন। তাঁরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান ও আবুল কালাম আজাদ, এএসআই ফিরোজ, গোলাম মোস্তফা ও আলাউদ্দিন এবং দুই কনস্টেবল আল আমিন ও মোস্তফা আজম।

অপহরণ মামলার বাদী কম্বল ব্যবসায়ী আবদুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আপস করার জন্য তাঁকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

গত বছরের ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার শহরের থানার পেছনের রোড থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদাপোশাকধারী ব্যক্তিরা আবদুল গফুরকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। এরপর ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তাঁর স্বজনদের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। দেনদরবারের পর ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় পরিবার। টাকা পৌঁছে দেওয়া হলে পরদিন ভোররাতে আবদুল গফুরকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি গফুরের স্বজনেরা সেনাবাহিনীর নিরাপত্তাচৌকির কর্মকর্তাকে জানান। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সেনাবাহিনীর এই নিরাপত্তাচৌকি স্থাপন করা হয়। মুক্তিপণ আদায়কারী ডিবি পুলিশের সদস্যরা মাইক্রোবাসে মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের লেগুরবিল এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় চৌকির সেনাসদস্যরা মাইক্রোবাস তল্লাশি করে তাতে ১৭ লাখ টাকা পান। এ সময় ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান দৌড়ে পালিয়ে গেলেও বাকি ছয়জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেন সেনাসদস্যরা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেন কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করে ছয়জনকে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে তাঁর জিম্মায় নেন। পরে এসআই মনিরুজ্জামান কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

এ ঘটনায় আবদুল গফুর বাদী হয়ে ২৬ অক্টোবর টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণ করে ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে কক্সবাজারের সাত ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে। মামলাটি তদারক করেছেন খোদ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি)। এই মামলায় ৬ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তিনি।

তবে মামলার বাদী আবদুল গফুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপহরণের সেই কথা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠি। কক্সবাজার ডিবি অফিসে নিয়ে গিয়ে ডিবির সদস্যরা বলেছিলেন, “ইয়াবা ও হুন্ডি কারবার করিস তুই। তোকে ক্রসফায়ারে দেব। যদি বাঁচতে চাস, এক কোটি টাকা দে।” এরপর শুরু হয় চোখ বেঁধে নির্যাতন।’ তাঁর কান্নাকাটি ফোনে স্বজনদের শোনান ডিবির সদস্যরা। দর-কষাকষির একপর্যায়ে টাকার পরিমাণ কমিয়ে ৫০ লাখ করে ডিবি। কিন্তু টাকা দিতে দেরি হওয়ায় গভীর রাতে গফুরকে টেকনাফের দিকে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে একটি গর্তের কাছে নিয়ে তাঁকে বলা হয়, ‘টাকা না দিলে এই মৃত্যুকূপই হবে তোর শেষ ঠিকানা।’

আবদুল গফুর জানান, মুক্তিপণ হিসেবে দেওয়া সেই ১৭ লাখ টাকা তিনি ফেরত পাননি। তিনি ন্যায়বিচার চান।

গ্রেপ্তারের পর ডিবির সাত সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি ডিবির সাত পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশও করে।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি।