মাসজুড়ে পানিসংকট

খিলগাঁওয়ের আদর্শবাগে একটি বাড়ি থেকে পানি সংগ্রহের জন্য লাইনে দঁাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন এলাকাবাসী। গতকালের ছবি।  প্রথম আলো
খিলগাঁওয়ের আদর্শবাগে একটি বাড়ি থেকে পানি সংগ্রহের জন্য লাইনে দঁাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন এলাকাবাসী। গতকালের ছবি। প্রথম আলো
>
  • এক বছর ধরে এলাকায় পানির সংকট চলছে
  • এক মাস ধরে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ
  • বাড়তি বিল আসছে কয়েক মাস ধরে

ব্যাংকার রফিকুল ইসলামের বাসায় এক মাস ধরে ওয়াসার লাইনের পানি আসছে না। পানি কিনে ব্যবহার করছে তাঁর পরিবার। পুরান ঢাকার কলতাবাজারের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, ওয়াসার পানি ব্যবহার করতে না পারলেও তাঁর বিল এসেছে প্রায় দুই হাজার টাকা। শুধু রফিকুল নন, ওই এলাকার আরও অনেক বাসিন্দা বাড়তি বিলের অভিযোগ করেছেন।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে পানির বিল আসে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। বাড়তি বিল আসছে কয়েক মাস ধরে। বাড়তি বিলের যন্ত্রণা তো আছেই—সবচেয়ে বড় ভোগান্তি হলো এক মাস ধরে লাইনে পানিই থাকে না।’

বাড়তি বিল ও পানিসংকটের এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে পুরান ঢাকার কলতাবাজারের কাজী আবদুর রউফ সড়ক ও হাজি আবদুল মজিদ লেন এবং গোয়ালঘাট, রোকনপুর, রায় সাহেব বাজার, কাজীবাড়ি ও ভাঙ্গাবাড়ি এলাকায়। এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহ করা হয় ওয়াসার মডস জোন-১-এর কাজী আবদুর রউফ লেনের পাম্প স্টেশন থেকে। স্টেশন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় পানি উত্তোলন করতে না পারায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

স্টেশনের সহকারী পাম্প অপারেটর আবুল হোসেন বলেন, দুই মাস আগে পাম্পের বোরিং নষ্ট ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি উত্তোলন কমে গেছে। আগে প্রতি মিনিটে পানি উঠত তিন হাজার লিটার। এখন উঠছে ৫০০ লিটার। যে কারণে এসব এলাকায় পানির সংকট তৈরি হয়েছে। নতুন পাম্প না বসানো পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না।

স্থানীয় লোকজন বলেন, এক বছর ধরে এসব এলাকায় পানির সংকট চলছে। তখন দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে লাইনে পানি আসত। কিন্তু এক মাস ধরে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ।

হাজি আবদুল মজিদ লেনের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, ‘চলতি বছরের শুরু থেকে পানি আসত রাত ১১টার পর। থাকত সকাল ১০টা পর্যন্ত। ছয়-সাত মাস ধরে এ অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন সে সুযোগও নেই।’

একই লেনের আরেক বাসিন্দা সাইদুর রহমান গত সোমবার ইংলিশ রোড থেকে তিন ড্রাম পানি নিয়ে এসেছেন। গতকাল দুপুরে দেখা গেল, সেই পানি ব্যবহার করে রান্নার কাজ করছিলেন সাইদুরের স্ত্রী জোবাইদা আকতার। এক চুলায় রান্না করার পাশাপাশি অন্য একটি চুলায় পানি ফোটানো হচ্ছিল। সে কাজ করতে করতে জোবাইদা বলছিলেন, ‘অনেক সময় গ্যাস থাকে না। তখন আবার পানি ফোটানোর জন্য গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। পানি, গ্যাস-দুই সংকটেই আছি আমরা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শিহাবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নষ্ট হয়ে যাওয়া মোটর পরিবর্তন করা হবে। ঈদের আগেই কাজ শুরু করা হবে।

বাড়তি বিলের অভিযোগ
গত মাসে ওয়াসার সরবরাহ লাইন থেকে পানি পাননি হাজি আবদুল মজিদ লেনের বাসিন্দা মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, এরপরও জুলাই মাস শেষে তাঁর শুধু পানির বিল এসেছে ৮০৯ টাকা। অথচ মাসজুড়েই তিনি দোকান থেকে পানি কিনেছেন।

মোক্তার বলেন, ‘বিল পাওয়ার পর ওয়াসার যাত্রাবাড়ী অফিসের এক কর্মকর্তাকে ফোন করে বাড়তি বিলের কারণ জানতে চাই। তিনি তখন নতুন মিটার কিনতে বলেন। কিন্তু মাস দু-এক আগেই আমি নতুন মিটার কিনেছি।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়াসার রাজস্ব জোন-১-এর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রনজু আহমেদ বলেন, জুন মাসের পর পানির বিল বেড়েছে। এ ছাড়া প্রতি মাসেই গ্রাহকের মিটার রিডিং করা সম্ভব হয় না। যার জন্য দু-তিন মাসের মিটারের হিসাব গড় করে বিল করা হয়। তখন বিল কমবেশি হয়। তবে মিটার রিডিং ভুল থাকলে অফিসে এলে সেটি ঠিক করে দেওয়া হয়।