দুই লিটার পানিতে তিন কাজ

খিলগাঁওয়ের আদর্শবাগ এলাকার বাসিন্দা সুফিয়া বেগম। গতকাল বুধবার দুই লিটার পানি দিয়ে তিনি রান্নার জন্য চাল পরিষ্কার করেছেন। এরপর এই পানি দিয়েই থালাবাসন পরিষ্কার করার পর মাছও পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, পানির তীব্র সংকটের কারণে এর চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাঁকে। স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য যে পানির দরকার, তা সংগ্রহ করতে তাঁকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকাতে সম্প্রতি পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে আদর্শবাগ এলাকাতে। সেখানে প্রায় ২০০ পরিবারের বসবাস। গত রমজান মাস থেকে পানির সংকট দেখা দিলেও গত কয়েক দিনে এই সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, গত রমজান মাসে রাত তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা পানি পাওয়া যেত। ঈদের পর থেকে পানির লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আদর্শবাগের পাশে অবস্থিত নুরবাগের পানির পাম্প থেকে মূলত পানি পান তাঁরা। কিন্তু সেখানেও পানির সংকট দেখা দেওয়ায় আদর্শবাগে পানি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আদর্শবাগে প্রায় পানিশূন্য অবস্থা।

পানির সংকট সমাধানের দাবিতে গত মঙ্গলবার আদর্শবাগে বিক্ষোভ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁরা বিক্ষোভ করে ফকিরাপুল ওয়াসা অফিসের সামনে এসে মানববন্ধন করেন।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, আদর্শবাগ এলাকার বাসিন্দারা একটি বাড়ির সামনে পানি নেওয়া জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আদর্শবাগ সমাজকল্যাণ সংসদের উপদেষ্টা এস এম সেলিম বিকল্প ব্যবস্থাপনায় কিছু পানি সরবরাহের চেষ্টা করছেন।

সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা গত মঙ্গলবার ওয়াসার অফিসের সামনে মানববন্ধন করার পর প্রধান প্রকৌশলী ওই দিন চার গাড়ি পানি পাঠানোর কথা বলেছেন। পরে দুই গাড়ি পানি দিয়েছেন। কিন্তু গতকাল কোনো পানি দেওয়া হয়নি। তাঁরা ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন অন্তত তিন ঘণ্টা পানি দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তাঁদের এই অনুরোধে সাড়া দেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, ওয়াসা বলেছে পাম্প বসানোর জন্য জায়গার ব্যবস্থা করতে। জায়গা পেলে তারা পাম্প বসিয়ে দেবেন। কিন্তু এলাকাবাসী পাম্প বসানোর জায়গা কোথায় পাবেন? জায়গার ব্যবস্থা করা আদর্শবাগের বাসিন্দাদের জন্য অসম্ভব।

জানা গেছে, পানিসংকট সমাধানে ডিএসসিসির ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে এলাকাবাসী একাধিকবার বৈঠক করেছেন। ওয়াসার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন। কিন্তু এর কোনো সুরাহা এখনো হয়নি।

কাউন্সিলর আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে আদর্শবাগের পাশাপাশি গোড়ানসহ আশপাশের এলাকাতেও এই সংকট দেখা দিয়েছে। সমস্যার সমাধানে ওয়াসাকে অনুরোধ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নদী থেকে পানি সরবরাহের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বুড়িগঙ্গা ও বালু নদী থেকে পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ কাজ পুরোপুরি শেষ হলে সংকট কিছুটা হলেও কমবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ওয়াসার মডস জোন-৬-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়ার খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, পানির সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাল (বৃহস্পতিবার) ওই এলাকায় পানি যাবে।