ডিজিটাল হাট ও খামারে বিক্রি হবে ৮ লাখ গরু

.
.

গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘রাজা বাবু’। প্রায় দুই টন ওজনের এই গরু আছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের একটি খামারে। কোনো হাটে বা বাজারে নয়, বিক্রির জন্য রাজা বাবু এখন অনলাইন দোকানে। এর ছবি ও পরিচিতিও আছে সেখানে। ২২ লাখ টাকা দাম চাওয়ার পর রাজা বাবুকে দেখতে মালিক ইতি আক্তারদের খামারে রীতিমতো মেলা জমে উঠেছে।

শুধু রাজা বাবু নয়, এবারের কোরবানির ঈদে যে ৫০ লাখ গরু বিক্রি হবে, তার মধ্যে ৮ লাখ গরু সরাসরি খামার ও অনলাইনে বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ও মাঝারি খামার, অনলাইন দোকান, ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব গরু বিক্রি হচ্ছে। এসব খামার ও অনলাইন দোকানের উদ্যোক্তারা বলছেন, তিন বছর ধরে এভাবে গরু বিক্রির হার তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে। ঈদের আগে সুবিধাজনক সময় এসব গরু ক্রেতাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

তিন বছর ধরে কোরবানির পশুর হাটে দেশি গরুর সংখ্যা বাড়ছে। মূলত ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসা কমে যাওয়ায় এই খাতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন। গরু লালন-পালনের পাশাপাশি কেনাবেচায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই খাতে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।

এ বছর শুধু পিকেএসএফের মাধ্যমে ১০ লাখ গরু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মোটাতাজা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ লাখ গরু বিক্রি হবে অনলাইন ও সরাসরি খামার থেকে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বিক্রি হবে ২ লাখ গরু।

এ ব্যাপারে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে গবাদিপশু লালন-পালনে একটি নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। আমরা যে ১০ লাখ গরু লালন-পালনের জন্য অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি, তাতে নিরাপদ খাবার, ওষুধ ও পরিবেশ নিশ্চিত করছি। প্রতিটি গরুর বিমার ব্যবস্থাও আমরা করেছি। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষ এতে লাভবান হচ্ছে।’

.
.

খামার ও অনলাইনের বাইরে প্রায় ৪২ লাখ গরু দেশের বিভিন্ন হাটে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অবশ্য এসব হাটে কেনাবেচা বলতে গেলে শুরুই হয়নি। শহরের ফ্ল্যাট বাড়ির বাসিন্দাদের অনেকেই বেশি আগে গরু কিনতে চান না। বাসায় গরু রাখার জায়গার অভাব ও ব্যবস্থাপনার সমস্যার কারণে মূলত শহুরে ক্রেতারা অনলাইন ও খামার থেকে গরু কেনার দিকে ঝুঁকছেন।

এ ব্যাপারে দেশের বেসরকারি খাতে গবাদিপশুর খামারের অন্যতম উদ্যোক্তা বেঙ্গল মিটের বিপণন বিভাগের পরিচালক এইচ ইউ এম মেহেদি সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইন ও সরাসরি খামার থেকে গরু বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়ে গেছে।’

খামার-অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গরুর ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, প্রথাগত হাটের বাইরে গরু বিক্রি বেড়ে যাওয়ার এই নতুন প্রবণতা দুই পক্ষের জন্য লাভজনক। প্রথমত বিক্রেতারা সড়কের যানজট, রোদ-বৃষ্টি ও চাঁদাবাজি উপেক্ষা করে হাটে নেওয়ার ঝামেলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত হাটে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে তাঁরা রক্ষা পাচ্ছেন ও গরুর খাদ্য এবং নিরাপদ স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সদস্য খামারিদের মাধ্যমে অনলাইনে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ গরু বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারে গরু বিক্রির হাট রয়েছে। সেখানে গরুর ছবি ও ভিডিও আমরা তুলে দিচ্ছি। এগুলো দেখে ক্রেতারা পছন্দ করে অগ্রিম কিনে নিচ্ছেন। ঈদের আগে সুবিধাজনক সময় আমরা সেই গরু ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।’

অনলাইনে গরু কিনেছেন এমন কয়েকজন ক্রেতা বলছেন, হাটে পছন্দের গরু না পাওয়া এবং দামের দিক থেকে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। একই সঙ্গে কৃত্রিমভাবে গরুকে দ্রুত মোটা করতে এবং সবল দেখাতে বিক্রেতারা হাটে নানা ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেন, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। খামার ও অনলাইন থেকে গরু কেনার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিষাক্ত গরু কেনার ঝুঁকি কম।