প্রাণ গেল ইজিবাইকচালকের, বাসে আগুন

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় যাত্রীবাহী বাসের চাপায় ইউনুস আলী চৌকিদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় বাসের চার যাত্রীও কমবেশি আহত হন। নিহত ইউনুস ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালাতেন। আজ শনিবার সকালে উপজেলায় রাজৈর বাসস্ট্যান্ডের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাস ওই ইজিবাইকচালককে চাপা দেয়।

দুর্ঘটনার পর পুলিশ বাসটি জব্দ করলেও চালক ও তাঁর সহকারী পালিয়ে গেছেন।

নিহত ইউনুস আলী চৌকিদার শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের মোবারক চৌকিদারের ছেলে। আহত ব্যক্তিদের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন আবুল হাসান, জাকির হোসেন, বলরাম কীর্তনীয়া ও সুকুমার সিকদার।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, ইউনুস রাজৈর বাসস্ট্যান্ডে সড়কের পাশে ইজিবাইক রেখে পানি দিয়ে সেটি পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় যাত্রীবাহী বাসটি এসে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা বেশ কিছুক্ষণ মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা সড়কটি অবরোধ করে রাখে। এ সময় বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট আগুন নেভায়।

নিহত ব্যক্তির পরিবার বলছে, এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় নিহত ইউনুসের ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বাসের চালক ও মালিক শহিদুল ইসলামের নামে শরণখোলা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। শহিদুল জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার কালিকাবাড়ি এলাকার জব্বার খানের ছেলে।

নিহত ব্যক্তির ভাই নজরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলামের ভাষ্য, এক সপ্তাহ আগে ইজিবাইকে যাত্রী তোলা নিয়ে ইউনুসের সঙ্গে বাসচালক শহিদুলের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেদিন হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে বিষয়টি খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্থানীয় লোকজন বসে মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। ওই সময় ক্ষুব্ধ ওই বাসচালক ইউনুসকে দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন।

ওই ঘটনার জেরে পরিকল্পিতভাবে বাসচাপায় ইউনুসকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের।

ফায়ার সার্ভিসের শরণখোলা স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা মো. জলিল সিকদার বলেন, মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলার তাফালবাড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী একটি বাস ওই এলাকায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইজিবাইকচালক ইউনুস আলীকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ সময় বাসের চারজন যাত্রীও আহত হয়েছেন।

এই ইজিবাইকচালক তাঁর গাড়িটি রাস্তার পাশের একটি পুকুরের পানি দিয়ে ধোয়ামোছা করছিলেন। তিনি মোরেলগঞ্জ-তাফালবাড়ি সড়কে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এসে বাসটিতে আগুন দিয়ে ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নেভায়। আগুনে বাসটির আংশিক পুড়ে যায়।

শরণখোলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মফিজুর রহমান শেখ বলেন, ঘটনার পর সড়কে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকলেও পরে স্বাভাবিক হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। বাসটি (ঢাকা চ-৯৩০) জব্দ করা হয়েছে। তবে বাসের চালক ও তাঁর সহকারী পালিয়ে গেছেন। তাঁদের আটকের চেষ্টা চলছে।