বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনাকারীদের বিচার হয়নি: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আদালতে বিচার কার্যক্রম শেষ হলেও এখনো হত্যার পরিকল্পনাকারীদের বিচার হয়নি। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনায় তিনি এই দাবি করেন। আজ শনিবার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে আয়োজিত এই আলোচনায় ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জোয়াও তোবাজারা ডি অলিভিয়েরা জুনিয়র, স্পেনের রাষ্ট্রদূত এদোয়ার্দো দ্য লেগলেসিয়া দেল রোসালসহ ৫০ দেশের প্রায় ৫০ কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে বলেন, ‘একটি দেশের জাতির পিতাকে হত্যা করার পর আইন করে সেই হত্যার বিচারের কার্যক্রম বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ইনডেমিনিটি বিলে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তারপর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিলেও এই আইন বাতিল করেননি। শুধু তা-ই নয়, জিয়াউর রহমানের পর এরশাদ এবং ১৯৯০ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরও এই কালো আইন বাতিল করেনি। বরং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই আইন বাতিল হয় এবং মামলার কার্যক্রম শেষ হয়।’
আনিসুল হক আরও বলেন, ‘মামলা নিয়ে বিচারকদের বিব্রতবোধের বিড়ম্বনার পাশাপাশি তথ্য ও দলিলাদি সংগ্রহ করতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে সরাসরি হত্যাকারীদের আমরা বিচারের আওতায় আনতে পেরেছি। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে মূল পরিকল্পনাকারীরা। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা এখন বেশ স্পষ্ট। তাই আমি মনে করি, আদালতে বিচারের কার্যক্রম শেষ হলেও এখনো হত্যার পরিকল্পনাকারীদের বিচার হয়নি।’

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাংসদ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমার বয়স তখন মাত্র ৩ বছর ৯ মাস। মা-বাবার সাথে কোনো সুখস্মৃতি আমার মনে নেই। শুধু মনে আছে মেঝেতে রক্তাক্ত পড়ে থাকা আমার বাবার লাশ এবং তারপর মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে থাকা রক্তের কথা।’ তিনি বলেন, ‘মা-বাবা ছাড়া আমাদের কেউ দীর্ঘ সময় আশ্রয় দিতে চায়নি। এই আত্মীয়র বাসা থেকে ওই আত্মীয়ের বাসায় আমার ৫ বছরের বড় ভাই আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের বেশি কেউ আমাদের আশ্রয় দেয়নি। কিন্তু এটা বড় কষ্ট ছিল না। সবচাইতে বড় কষ্ট ছিল, হত্যাকারীদের বিচার করতে না পারা। আর তার থেকেও বড় কষ্ট ছিল বঙ্গবন্ধু ও আমার বাবাকে নিয়ে চালানো প্রোপাগান্ডা।’
তাপস উপস্থিত কূটনীতিকদের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, ‘আত্মস্বীকৃত খুনিরা জানিয়েছেন, জিয়াউর রহমানের সাথে দেখা করে ক্যু-এর কথা জানানো হয় এবং প্রত্যুত্তরে জিয়া বলেন, “গো এহেড”। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এমনকি ভারতেও কোনো আর্মি অফিসারের এমন মন্তব্যকে কী বলা হয়? এটা কি সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়। বিষয়টা এভাবেই বলা, “আমি যেতে পারছি না, তোমরা কাজটি করে এসো।” এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা এখন স্পষ্ট। আমি কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বলে যাব, বঙ্গবন্ধু ও আমার পরিবার হত্যায় সরাসরি জড়িত জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোস্তাক।’

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর জাপানি চলচ্চিত্রকারের নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের সাক্ষাৎকার এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের একটি সাক্ষাৎকার প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান দীপু মনি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য শাহ আলী ফরহাদ। বিজ্ঞপ্তি