ঢাকার পশুর হাট আ.লীগের স্থানীয় নেতাদের দখলে

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
>
  • ডিএসসিসিতে এবার ১৫টি অস্থায়ী হাট বসছে
  • ডিএসসিসির ১৫টির মধ্যে ১৩টি পেয়েছেন আ. লীগের নেতা-কর্মীরা
  • ডিএনসিসি এলাকায় অস্থায়ী হাট বসছে ৯টি
  • ডিএনসিসির ৯টিই পেয়েছেন সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা

রাজধানীর ২৪টি পশুর হাটের মধ্যে ২২টির ইজারা পেয়েছেন সরকারি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে এবং একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাঁরা এসব হাটের ইজারা নিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে এসব নেতার যোগসাজশ থাকার অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) এবার ১৫টি অস্থায়ী হাট বসছে। এর মধ্যে ৭টির ইজারা হয়েছে। দরপত্র ছাড়া খাস আদায়ের মাধ্যমে বসছে আরও ৮টি। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় অস্থায়ী হাট বসছে ৯টি।

ডিএসসিসির ১৫ হাটের হালচাল
তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডিএসসিসির ১৫টি হাটের মধ্যে ১৩টিই পেয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এঁদের মধ্যে স্থানীয় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন সরকার কামরাঙ্গীরচর, শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ রেলগেট বাজার, ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহ আলম মেরাদিয়া, আওয়ামী লীগের কর্মী জাহিদুল ইসলাম হাজারীবাগ, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান আসকারী ধূপখোলা এবং সামসাবাদের আওয়ামী লীগের কর্মী এম এ কাইয়ুম বংশাল হাটের ইজারা পেয়েছেন।

এ ছাড়া পোস্তগোলা শ্মশানঘাট ইজারা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। কমলাপুর-আর কে মিশন রোডে ইজারা পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী আমের খান, তাঁর পরিবর্তে তদারকী করছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মিয়া। নারিন্দার কাউয়ার টেকে ডিএসসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ভূঁইয়া, গোলাপবাগে যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম, মেরাদিয়া মৌজার লোহারপুল এলাকায় সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, আমুলিয়া মডেল টাউনে যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন, শনির আখড়ায় আওয়ামী লীগের কর্মী মোস্তাক আহম্মেদ ইজারা পেয়েছেন।

সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বাইরে শ্যামপুর বালুর মাঠে কদমতলী থানা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এম এ কাইয়ুম ও রহমতগঞ্জ মাঠে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির সহসভাপতি শফি মাহমুদ ইজারা পেয়েছেন।

গত ২৭ জুন ১৩টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের দরপত্র আহ্বান করেছিল ডিএসসিসি। পরে তিন দফা দরপত্র আহ্বান করে সাতটি হাটে কাঙ্ক্ষিত দর পায় ডিএসসিসির হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি। বাকি ছয়টি হাটের বিষয়ে গতকাল রোববার পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল ডিএসসিসি।

তবে এই ছয়টির মধ্যে আর কে মিশন রোড, সামসাবাদ, ধূপখোলা, শনির আখড়া ও কাউয়ার টেক এলাকার হাট থেকে খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি। এর বাইরে মেরাদিয়া মৌজা ও আমুলিয়া মডেল টাউন এলাকায় আরও দুটি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ছয়টি হাটের খাস আদায় প্রক্রিয়ার পেছনে একটি সিন্ডিকেট কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বাস্তবতায় পশুর হাট পরিচালনার মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। সাধারণত যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সে দলের নেতারাই হাট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত থাকেন। তবে যে দলের নেতারাই হাট পরিচালনা করুন না কেন, কম দরে হাট নেওয়ার সুযোগ নেই।

সিন্ডিকেটের প্রভাবের বিষয়ে মেয়র বলেন, যেকোনো ব্যবসা-বাণিজ্যেই সিন্ডিকেট হতে পারে। তবে যেসব হাট খাস আদায়ের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া হয়েছে, তা অন্যান্য হাটের দরের সঙ্গে যথাযথ মিল রেখেই দেওয়া হয়েছে।

ডিএনসিসি
ডিএনসিসি এলাকায় ৯টি হাটের মধ্যে উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরে উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, খিলক্ষেত ৩০০ ফুট সড়কে ভাটারা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক এলাকায় দক্ষিণখান থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আনিছুর রহমান ইজারা পেয়েছেন।

ভাটারায় স্থানীয় থানা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মারফত আলী, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাঠে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মাসুদ হোসেন, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কে যুবলীগের কর্মী শাহ আলম হোসেন, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে আওয়ামী লীগের কর্মী আশরাফ উদ্দিন, মিরপুর ডিওএইচএসে মহানগর উত্তরের সহসভাপতি আশরাফ উদ্দিন, মৈনারটেকের শহীদনগরে উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন ইজারা পেয়েছেন।