'রুট খুব ভালো আছে, বুঝলেন?'

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ধেরুয়াতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উড়ালসেতুর একপাশ খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখান দিয়ে চলছে ঢাকামুখী যানবাহন। আজ সকালে তোলা ছবি। ছবি: সোহেল মোহসীন
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ধেরুয়াতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উড়ালসেতুর একপাশ খুলে দেওয়া হয়েছে। সেখান দিয়ে চলছে ঢাকামুখী যানবাহন। আজ সকালে তোলা ছবি। ছবি: সোহেল মোহসীন

‘রুট খুব ভালো আছে, বুঝলেন? কোনো যানজট নাই, আমরা ভালো কইর‌্যা গাড়ি চালাইতাছি।’

ঈদে বাড়ি ফেরার এই মুহূর্তে সমস্ত যাত্রাপথে যখন প্রচণ্ড ভিড় থাকার কথা, তখন এই কথাগুলো একটু বেমানানই মনে হয়। তবে এভাবেই বললেন সাতক্ষীরাগামী ট্রাকচালক মাজাহারুল ইসলাম।

টাঙ্গাইলের ধেরুয়া রেলক্রসিংয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কথা হয় মাজহারুলের সঙ্গে।

আজ সোমবার সকালে মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখী লোকজন নিয়ে স্বাভাবিক গতিতেই ছুটে চলছে যানবাহন। মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার ক্যাডেট কলেজ থেকে জামুর্কী পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকার কোথাও যানজট নেই। এই অংশের যানজটপ্রবণ হিসেবে পরিচিত ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকাতেও যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলছে। খুলে দেওয়া হয়েছে রেলক্রসিংয়ের উড়ালসেতুর উত্তর পাশ। ওই অংশ দিয়ে ঢাকামুখী যানবাহন চলছে। আর নিচ দিয়ে চলছে টাঙ্গাইলসহ উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন।

উত্তরাঞ্চলগামী পিকআপের যাত্রী মো. সাবু বললেন, ঢাকায় রিকশা চালাতেন তিনি। চিন্তা করেছেন এখন থেকে গ্রামের বাড়িতে থাকবেন। এ জন্য পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে রিকশাসহ মালামাল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। সকালে রওনা হয়েছেন। আগে ঈদের বাড়ি যাওয়ার সময় যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। কিন্তু আজ রাস্তায় তাঁদের যানজটে পড়তে হয়নি।

এই মহাসড়ক খুবই যানজটপ্রবণ হিসেবে পরিচিত ছিল। স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার যানবাহন চললেও ঈদের সময় তা বেড়ে প্রায় ২৭ থেকে ২৮ হাজারে দাঁড়াত। এ জন্য সরকার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করে। রাস্তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রতিবছর ঈদ এলেই মহাসড়কের ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের লোকজনের মনে যানজট-আতঙ্ক বিরাজ করত। কারণ, এখান দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু রেল সংযোগ সড়কে গড়ে প্রতিদিন ১৫টি ট্রেন ৩০ বার যাওয়া-আসা করে। এতে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ওই সময় ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি হয়। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে এই সড়কে ঢাকা থেকে রাজশাহী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও খুলনা পর্যন্ত আরও চারটি স্পেশাল ট্রেন চলে। ফলে, ঈদের সময় একদিকে যানবাহনের প্রচুর চাপ, অন্যদিকে ট্রেন চলাচলের কারণে ধেরুয়া এলাকায় ঈদের সময় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হতো। কিন্তু এবার ঈদের আগে ধেরুয়া উড়ালসেতুর একপাশ খুলে দেওয়ায় নির্বিঘ্নে যানবাহন চলছে।

তিন বছর আগে শুরু হওয়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ ইতিমধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। ১৪ আগস্ট গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাসড়কের ২৩টি সেতুও উদ্বোধন করেছেন। ওই সেতুগুলোর ওপর দিয়ে যানবাহন চলছে। যানবাহনের চালকেরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার সুবিধা ভোগ করছেন।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক জানান, মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। ঈদে ঘুরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।