জজ মিয়ার পরিবারকে টাকা দেয় সিআইডি

(২১ আগস্ট, ২০০৬ সালে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন। বানানরীতি ও অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।)

২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া নোয়াখালীর সেনবাগের জজ মিয়ার পরিবারকে নিয়মিত টাকা দিচ্ছে সিআইডি। দেওয়া হচ্ছে সংসার চালানোর খরচ হিসেবে। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত টাকা দিয়ে যাবে এ সরকারি সংস্থাটি। 

এ ছাড়া জজ মিয়াকে এই মামলায় রাজসাক্ষী করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সিআইডি।
জজ মিয়ার ছোট বোন খোরশেদা বেগম (১৫) গতকাল রোববার এ কথা জানায়। ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির আগে গতকাল প্রথম আলোসহ একাধিক দৈনিক ও একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকেরা নোয়াখালীর সেনবাগের কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামে জজ মিয়ার বাড়িতে যান। এ সময় সাংবাদিকেরা তার ছোট বোনের দেওয়া তথ্য ভিডিওতে ধারণ করেন।
খোরশেদা আরও জানায়, গত বছর ৯ জুন তার ভাইকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে মাসিক খরচ হিসেবে নিয়মিত দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। সিআইডির বিশেষ সুপার (এসএস) রুহুল আমীন প্রতি মাসে তার মাকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে এ টাকা দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসএস রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, জজ মিয়ার মায়ের সঙ্গে তার কোনোদিন দেখাই হয়নি। টাকা দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। তা ছাড়া এ ধরনের টাকা তিনি কেন দিতে যাবেন?
জজ মিয়ার বোন খোরশেদা জানায়, তার মা জোবেদা খাতুন সিআইডির এসএস রুহুল আমীনের ফোন পেয়ে গতকাল সকালে ঢাকা রওনা হন। আজ সোমবার মামলার শুনানি থাকায় তিনি আদালতে জজ মিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন।
গতকাল জজ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার ছোট বোন খোরশেদা ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। খোরশেদা জানায়, তার দুই ছোট ভাই সাইদুল ও বাবু ঢাকার নয়াবাজারে তাদের প্রতিবেশী খলিলের ব্যাগের কারখানায় কাজ করে। সেখানে সামান্য বেতন পায়। ওই বেতনের টাকা আর সিআইডির দেওয়া টাকায় এখন তাদের সংসার চলে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলায় ২২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আড়াই শয়ের বেশি লোক।
এ মামলা তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ জজ মিয়াসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এদের সবাইকে দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ানো হয়। জজ মিয়ার জবানবন্দি গত বছরের ২৬ জুন ঢাকার মহানগর হাকিম নথিভুক্ত করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে গিয়ে জজ মিয়া বলেন, গ্রেনেড ও বোমার পার্থক্য তিনি জানেন না। জজ মিয়া তার জবানবন্দিতে গ্রেনেড হামলার জন্য রাজধানীর ১১ জন সন্ত্রাসীর নাম উল্লেখ করেন। এরা হলো রবিন, শফিক, বকুল, হাশেম, লিংকন, আনু, মুকুল, সুব্রত বাইন, জাহিদ, জয় ও মোল্লা মাসুদ। জজ মিয়া বলেছেন, হামলায় নেতৃত্ব দেয় বাড্ডার সন্ত্রাসী মুকুল। তবে তার জবানবন্দির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে।
জানা গেছে, সেনবাগ উপজেলার বোকারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামের প্রয়াত আবদুর রশিদের দ্বিতীয় সংসারের ছেলে জজ মিয়ার জন্ম ঢাকার তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকায়। বাবার ভাঙারি (স্ক্র্যাপ মাল) ব্যবসার সুবাদে ওই পরিবারের সবাই প্রথমে নাখালপাড়ার তিব্বত বস্তি এবং পরে নূরানি মসজিদের পাশে থাকতেন। ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয় জজ মিয়া। তারা তিন ভাই, দুই বোন। জজ মিয়া এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
জজ মিয়ার বীরকোট গ্রামের বাসিন্দা মতলব মিয়া জানান, এলাকার সবার কাছেই জজ মিয়া ভদ্র, সহজ সরল হিসেবে পরিচিতি। তিনি এ রকম কাজ করতে পারেন না। একই বাড়ির গৃহিণী আনোয়ারা বেগম (৪৫) জানান, বাড়িতে এলে তিনি কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়াও করতেন না। তিনি কেন মানুষ মারতে যাবেন?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, এ রকম চাঞ্চল্যকর মামলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া আসামির পরিবারকে পুলিশের সাহায্য করার ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। অনেক সাক্ষীর পরিবারকে সহায়তার কথা অবশ্য শোনা গেছে। তিনি বলেন, এ মামলায় যেখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে, সেখানে এ ধরনের কাজ করা ঠিক নয়।