চার বছরেও আর্জেস গ্রেনেডের উৎসের খোঁজ মেলেনি

অবিস্ফোরিত গ্রেনেড। ছবি:জিয়া ইসলাম
অবিস্ফোরিত গ্রেনেড। ছবি:জিয়া ইসলাম


(২১ আগস্ট, ২০০৮ সালে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন। বানানরীতি ও অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।)

চার বছর পরও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলায় ব্যবহূত আর্জেস গ্রেনেডের উত্স খুঁজে বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনকি এ-সংক্রান্ত মামলার যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতেও গ্রেনেডের মূল উেসর কথা উল্লেখ নেই। 

তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ গ্রেপ্তার হওয়া একাধিক জঙ্গি জবানবন্দিতে বলেছেন, ২১ আগস্টসহ বিভিন্ন হামলায় ব্যবহূত গ্রেনেড সাবেক জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন সরবরাহ করেছেন। মাওলানা তাজউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা গেলে আর্জেস গ্রেনেডের মূল উত্স জানা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সিআইডির কর্মকর্তারা।
গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, মাওলানা তাজউদ্দিন পাকিস্তান বা দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাজউদ্দিন পাকিস্তানের মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সময়ই আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ভারতে তত্পর পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়েবার সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হুজির ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আবু তাহের (২১ আগস্ট মামলায় গ্রেপ্তার আছেন) তাঁর ভায়রা এবং একই সংগঠনের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মনির তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার। ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে তাঁকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
মুফতি হান্নানের ভাষ্যমতে, তাজউদ্দিনের দেওয়া গ্রেনেড দিয়ে ২১ আগস্ট ছাড়াও সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের মেয়র কামরান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ওপর হামলা চালানো হয়। মুফতি হান্নান আদালতে ও গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, মাওলানা আবু সাইদের সহযোগিতায় তাজউদ্দিন কয়েক দফায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে বেশ কিছু গ্রেনেড পাঠান, যা কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
প্রস্তুতকারী কোম্পানিসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, মূলত অস্ট্রিয়ায় এই গ্রেনেড তৈরি হয়ে থাকে। তবে পাকিস্তানেও এই আর্জেস গ্রেনেড তৈরির কারখানা আছে। ২১ আগস্ট মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এই ঘটনায় তদন্ত সহায়তায় আসা ইন্টারপোল ও এফবিআইয়ের বিশেষজ্ঞরাও একই তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সে দেশে এই গ্রেনেড অনেক দিন ধরেই ব্যবহার করছে। ২০০১ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলায়ও এই গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে ২০০৩ সালে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার একটি ঘর থেকে পুলিশ চারটি একে-৪৭ রাইফেল ও ২০টি আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার করেছিল। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ করে এক সন্ত্রাসীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার মতে, ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আর্জেস গ্রেনেডের উেসর একটা সন্ধান হয়তো পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ওই সময় বা পরে এই সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া ২০০৫ সালের ৯ জানুয়ারি র্যাব রাজধানীর অদূরে আমিনবাজার থেকে একটি গ্রেনেড উদ্ধার করে। এই ঘটনায় র্যাব নজরুল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল। তখন র্যাবের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল, নজরুল বলেছেন তিনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী থেকে এই গ্রেনেড এনেছেন। কয়েক দিন পর ওই বছরের ২ জুলাই ‘ক্রসফায়ারে’ নজরুল নিহত হওয়ায় গ্রেনেডের উত্স আর বের হয়নি।
২০০৬ সালের ১০ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মগবাজারে ড্রেন থেকে পাঁচটি আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার হয়। হঠাত্ মগবাজারের ড্রেনে কে বা কারা কেন গ্রেনেড ফেলে গেল, এ প্রশ্নের জবাবও মেলেনি গত দুই বছরে।