সাংসদের সামনেই অধ্যক্ষকে মারধর

স্থানীয় সাংসদের উপস্থিতিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে একটি কলেজের অধ্যক্ষকে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তাঁকে রাজশাহীতে চিকিৎসা নিতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় গত রোববার রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে পালিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অধ্যক্ষ।

কলেজটি হচ্ছে গোদাগাড়ী ডিগ্রি কলেজ। এ মাসেই এটি সরকারি কলেজ হয়েছে। এর অধ্যক্ষ আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, কলেজ সরকারীকরণের বিনিময়ে এই কলেজের আগের সভাপতি নাকি সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীকে এক কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন। সেই টাকা শোধ হয়নি। এ নিয়ে সাংসদের ক্ষোভ। সাংসদের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে এই টাকা তোলা হয়েছে বলে সাংসদ অধ্যক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ। অধ্যক্ষের দাবি, ৬৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা তিনি আর জোগাড় করতে পারেননি। তবে সাংসদ ওমর ফারুক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গতকাল সোমবার রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মারধর করাননি, তিনি বরং অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন।

সাংসদ বর্তমানে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। এর আগে সভাপতি ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিঞা। অধ্যক্ষের ভাষ্য, বদরুজ্জামান কলেজের সভাপতি থাকার সময় নাকি সাংসদকে বলেছিলেন, কলেজটি সরকারি করে দিলে যা লাগে, দেওয়া হবে। সেটাকেই সাংসদ এক কোটি টাকা ধরে বসে আছেন। তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগের অনুদানের অর্থ থেকে ৬৫ লাখ টাকা সাংসদকে দেওয়া হয়েছে। গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়ায়েজ উদ্দিন বিশ্বাস ও কলেজের শিক্ষক কামরুজ্জামান বকুলের মাধ্যমে এই টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা না পাওয়ায় সাংসদ ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।

এই নোটিশে অধ্যক্ষকে ১৫টি প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। নোটিশের ১৩ নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সময়ে মাননীয় সংসদ সদস্যকে আপনি কটূক্তি করেন এবং তাঁর নাম ভাঙিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন।’ অধ্যক্ষ বলেন, তিনি প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়েছেন।

এসব বিষয় নিয়ে গত রোববার কলেজের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠকটি বেলা তিনটায় হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয়েছিল বিকেল পাঁচটায়। কলেজের স্টাফ রুমে বৈঠক চলছিল। অধ্যক্ষ জানান, সভায় কলেজের শ খানেক শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সাংসদ তাঁর কাছে জানতে চান, কেন তিনি তাঁর নাম ভাঙিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন। তিনি নয়জন শিক্ষককে দাঁড় করিয়ে প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করেন, কার কাছ থেকে কত টাকা তোলা হয়েছে।

অধ্যক্ষ বলেন, এই টাকা ওয়ায়েজ উদ্দিন বিশ্বাস ও শিক্ষক কামরুজ্জামানের মাধ্যমে সাংসদকেই দেওয়া হয়েছে-এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ায়েজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে (কলেজের শিক্ষক) তাঁকে কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। তখন ওয়ায়েজ উদ্দিনও তাঁকে মারতে শুরু করেন। আরও কয়েকজন শিক্ষক হামলায় যোগ দেন। তখন সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটা। সাংসদের সামনেই এসব ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে তিনি পালিয়ে যেতে চাইলে ছাত্রলীগের ছেলেরা আবার হামলা করেন। তখনো সাংসদ দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সার্কেল এএসপি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের ছেলেরা বাধা দেন। একপর্যায়ে গোদাগাড়ী থানার ওসি পুলিশ সুপারকে ফোন করে রাজশাহী থেকে পুলিশ এনে তাঁকে উদ্ধার করেন। তিনি রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হলে সেখানেও ছাত্রলীগের ছেলেরা এসে তাঁকে ঘিরে ধরেন। তাঁর কোথায় লেগেছে, সেই জায়গা টিপতে থাকেন। তিনি ব্যথায় কাতরাতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁকে সিটি স্ক্যান করাতে একটি বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানেও গিয়ে একই অবস্থা দেখেন। বিপদে পড়ার আশঙ্কায় তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রাত ১১টার দিকে ঢাকায় রওনা দেন।

যোগাযোগ করা হলে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের সভা চলাকালে ওয়ায়েজ উদ্দিন বিশ্বাসের সঙ্গে অধ্যক্ষের কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে কলেজের শিক্ষকেরাও তাঁর বিরুদ্ধে চলে যান। বহিরাগত লোকজন এসে দরজা ভেঙে তাঁকে মারধর করেন। সাংসদ বলেন, সেখানে থানার ওসি, ইউএনওসহ গুরুত্বপূর্ণ লোকজন ছিলেন।

বহিরাগত লোকজন কি আপনারই? এ প্রশ্নের জবাবে সাংসদ বলেন, ‘বহিরাগতরা আমার নয়, ওরা জনতা।’ ওরা কোথা থেকে এল? সাংসদের জবাব, ‘আমিও তো তা-ই বলছি, ওরা কোথা থেকে এল!’