শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের নানা উদ্যোগ

দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুত। ছবি: তাফসিলুল আজিজ
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুত। ছবি: তাফসিলুল আজিজ

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত নির্বিঘ্ন করতে র‍্যাব, এপিবিএন, বিজিবি, জেলা পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় আকাশে উড়বে ড্রোন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন মাঠের ভেতর ও বাইরে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা, পুরো মাঠ নজরদারির জন্য দুটি ড্রোন, আটটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে মুসল্লিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং মাঠ ও এর আশপাশে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি ও এপিবিএন সদস্য মোতায়েনসহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পুরো মাঠ ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, মাঠের ভেতর ও বাইরে পোশাক ও সাদাপোশাকে পুলিশবাহিনীকে সহায়তা করবে স্বেচ্ছাসেবক দল। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। শুধু পাতলা জায়নামাজ নিয়ে আসতে পারবেন। এরই মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। ঈদের দিন পর্যন্ত এলাকার কোনো বাসাতে নতুন কোনো ভাড়াটে যাতে না উঠে সে, বিষয়ে বাড়িওয়ালাদের আহ্বান করা হয়েছে। নতুন কোনো মানুষ এলাকায় এলে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ঈদের দিন মাঠের চারদিকের সব কটি প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়ে মাঠের দক্ষিণ দিকে তিনটি, পূর্ব দিকে তিনটি ও উত্তর পাশে একটি প্রবেশপথের আর্চওয়ে দিয়ে প্রত্যেক মুসল্লিকে ঢুকতে দেওয়া হবে। একটি পথ গাড়ি প্রবেশের জন্য রাখা হবে। এ ছাড়া মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।

২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরে শোলাকিয়া মাঠের পাশে বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার কারণে নিরাপত্তা জোরদারে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এবার শোলাকিয়ায় ১৯১তম ঈদুল ফিতরের জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা হিফজুর রহমান খান। সকাল নয়টায় জামাত শুরু হবে। মুসল্লিদের আসা-যাওয়ার জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রতি ঈদুল ফিতরে দেশ-বিদেশ থেকে প্রায় তিন লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগম হয় এ মাঠে। ১৮২৮ সালে এ মাঠে প্রথম বড় জামাতে একসঙ্গে সোয়া লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই সোয়া লাখ থেকে ঈদগাহ মাঠের নামকরণ হয় শোলাকিয়া।

২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন নামাজ শুরুর আগ মুহূর্তে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে আজিমউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে পুলিশের তল্লাশির সময় জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা করে। এ ছাড়া তাঁদের চাপাতির কোপে দুই পুলিশ কনস্টেবল মারা যান। এ সময় আরও ১২ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে জঙ্গি আবির রহমান মারা যান। উভয় পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে নিজ বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক। আটক করা হয় জঙ্গি শফিউলকে। পরে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার ডাংরি এলাকায় র‍্যাবের সঙ্গে এক বন্দুকযুদ্ধে শফিউল নিহত হন।

শোলাকিয়া হামলার ঘটনার মামলার চার্জশিট সরকারের পূর্বানুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ঐতিহ্য ও মর্যাদা রক্ষায় দ্রুত এর বিচারকার্য শেষ করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে মানুষের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনতে মামলার বিচারকার্য দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা ও শোলাকিয়া ট্রাজেডির যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, মুসল্লিদের বাড়তি নিরাপত্তায় প্রশাসন থেকে সব রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি ঐতিহ্যবাহী দেশের সর্ববৃহৎ এ মাঠে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরতে পারবেন মুসল্লিরা।