তাজউদ্দিন ও কায়কোবাদকে ফেরাতে তৎপরতা শুরু

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় পলাতক দুই আসামি মাওলানা তাজউদ্দিন এবং বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেইন কায়কোবাদকে ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে সরকার।

চলতি মাসেই মাওলানা তাজউদ্দিনকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনতে সে দেশের সরকারের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ ও পারস্পরিক আইনি সমঝোতা চুক্তি সই করতে চায় বাংলাদেশ। আর কায়কোবাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। তাঁকে ফেরাতেও একটি নতুন প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।

মাওলানা তাজউদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ২০০৮ সালে দেওয়া প্রথম অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) নেতা তাজউদ্দিন বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। পিন্টুও একই মামলার আসামি। সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, ইন্টারপোলের দক্ষিণ আফ্রিকার শাখা কার্যালয় বাংলাদেশের পুলিশকে জানিয়েছে, বাদল নাম লেখা ভুয়া পাসপোর্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছেন তাজউদ্দিন। তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

মাওলানা তাজউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার অগ্রগতি বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাব্বির আহম্মেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ ও পারস্পরিক আইনি সমঝোতা চুক্তি দুটি স্বাক্ষর হয়ে গেলেই তাঁকে ফেরাতে অথবা বাংলাদেশের আইনে দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর বিচার করা যাবে। তবে তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকার পাসপোর্ট পেয়েছেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া সহজ। আর পাসপোর্ট পেলে তিনি পাশের ছয়টি দেশে অনায়াসে চলে যেতে পারেন। তখন এই প্রক্রিয়া বিলম্ব হবে।

তবে বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র আরও জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান নেই। যদি এই মামলার রায়ে তাজউদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জটিলতা হবে।

>তাজউদ্দিনকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বিএনপির সাবেক সাংসদ কায়কোবাদকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পলাতক তাজউদ্দিনকে আটক করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। এরপর ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্টারপোল (প্রিটোরিয়া এনসিবি) শাখা এক চিঠিতে বাংলাদেশ পুলিশকে জানায়, তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় নজরদারিতে আছেন।

একই মামলার আসামি কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের সাবেক সাংসদ কায়কোবাদকে ২০১১ সালের ৩ জুলাই দেওয়া এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়। তখন তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে আর দেশে ফেরেননি।

সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী, কায়কোবাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন বলে তাঁরা জেনেছেন। এর আগে তাঁকে ফেরাতে বহিঃসমর্পণ প্রস্তাব পাঠানো হলেও যথাসময়ে তা আবুধাবিতে পৌঁছানো হয়নি। এমনকি তা অসম্পূর্ণ ছিল। তাই ওই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। পরে পুনরায় ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব পাঠাতে আবুধাবির ইন্টারপোলের শাখা থেকে অনুরোধ জানানো হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুনরায় প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা আশাবাদী যে তাঁকে ফেরাতে পারব।’