শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে ভোগান্তি

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী নৌপথে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে এ চাপ দেখা গেছে। স্পিডবোট ঘাটেও ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে গত রোববার সকাল থেকে ১৯টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে।

গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিমুলিয়া ফেরিঘাটে দেখা যায় মালবোঝাই ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস এবং কয়েক শ ছোট যানবাহন লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ঘাটে মোটরসাইকেলের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। শিমুলিয়া ঘাটের চারটিতেই যানবাহনের চাপ ছিল। এ সময় প্রতিটি ঘাটে শতাধিক যানবাহন ছিল। এ ছাড়াও টার্মিনালে আটকে ছিল শ খানেক পণ্যবাহী ট্রাক।

দুপুর ১২টার দিকে ঘাট এলাকায় কথা হয় মাইক্রোবাসের যাত্রী রকিব হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার জন্য সাতক্ষীরা যাবেন। সকাল ৯টায় রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘাটে আসেন। দুপুর হয়ে এলেও তিনি সিরিয়াল পাননি।

এ সময় শফিকুল ইসলাম রুবেল নামের প্রাইভেট কারের আরও এক যাত্রী বলেন, গতবার ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। এবারও নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি কম চলছে, তাই ভোরে ঘাটে এলেও এখন ফেরিতে ওঠার সুযোগ পেয়েছি।

হা-মীম পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সকাল সাতটায় ঘাটে এসেছি। এখনো সিরিয়াল পাইনি। যাত্রীরা গরমের মধ্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।
মেঘনা পরিবহনের যাত্রী রবিউল ইসলাম জানান, ৩ ও ৬ বছরের দুটি বাচ্চা নিয়ে রাজধানী থেকে খুলনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকাল ৯টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটে এসেছি। গরমে ঘাটে অপেক্ষায় থেকে বাচ্চারা কান্না করছে। কখন নদী পার হতে পারব কে জানে।

সেন্টু মিয়া নামে এক ট্রাক চালক বলেন, ৭ দিন ধরে ঘাটে এসেছি। নাব্যতা সংকটের কারণে অন্য যানবাহন নদী পার হলেও আমাদের ঘাটে আটকে রাখা হয়। শুনেছি ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তারপরও আমাদের ফেরিতে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।

শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) সিদ্দিকুর রহমান আজ দুপুর ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল ঈদ। তাই শেষ সময়ে দক্ষিণ অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য এ ঘাটে এসেছে। তাই সকাল থেকে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এগুলোর মধ্যে ছোট গাড়ির সংখ্যাই বেশি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে জানান, বর্তমানে প্রাকৃতিক চ্যানেল ছোট-বড় ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। শেষ সময়ে বাড়ি ফেরা যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। দুপুর পর্যন্ত ঘাট এলাকায় ৫ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে।

এদিকে লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে এ ঘাট থেকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটের দিকে যাচ্ছে। স্পিডবোটের চালকেরা বেশি ট্রিপ দেওয়ার লোভে যাত্রী বোঝাই করে ঝুঁকি নিয়ে একজন আরেক জনের আগে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

এ সময় গোলাম রসুল নামের এক যাত্রী বলেন, ফেরিতে যাতায়াতে দেড় ঘণ্টার মতো লাগে। স্পিডবোটে লাগে ১০-১৫ মিনিট। তাই স্পিডবোটে উঠেছি। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঈদের আগে ভাড়া ছিল দেড় শ টাকা। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮০ টাকা ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে।

স্পিডবোট ঘাটের সুপারভাইজার মো. ইলিয়াস ঢালি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা যাত্রী ও ভাড়া কোনোটিই বেশি নিচ্ছি না। প্রতিযোগিতা করেও কোনো বোট চলছে না।’ তিনি বলেন, মূলত লঞ্চগুলোই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে।

লঞ্চঘাটের সুপারভাইজার বলেন, ঈদের আর মাত্র ১ দিন বাকি, তাই ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। কিন্তু লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের লোকজন সব সময় ঘাটে আছে।