মুক্তি পেলেন, মেয়ের সঙ্গে ঈদ করবেন নওশাবা

কাজী নওশাবা আহমেদ
কাজী নওশাবা আহমেদ

নিরাপদ সড়কসহ কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার মডেল ও অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার কাজী নওশাবা আহমেদ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।

মঙ্গলবার কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ায় মেয়ে প্রকৃতির সঙ্গেই পবিত্র ঈদ উদ্‌যাপন করবেন কাজী নওশাবা আহমেদ।

কাশিমপুর মহিলা কারাগারের জেল সুপার শাহাজাহান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে নওশাবার জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছায়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে নওশাবাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

এর আগে গ্রেপ্তারের ১৬ দিনের মাথায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় নওশাবা আহমেদ জামিন পান। মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এ আদেশ দেন। নওশাবার আইনজীবী আদালতে আবারও জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত কাজী নওশাবা আহমেদকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেওয়া হয়। এর আগে গতকাল সোমবার অবশ্য আদালত তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করেন। অসুস্থ নওশাবাকে গতকাল আদালতে হাজির করে পুলিশ। সরেজমিনে দেখা যায়, নওশাবা হাঁটতে পারছেন না। বসেছিলেন হুইল চেয়ারে। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দুজন মহিলা পুলিশ তাঁকে কোলে করে গাড়িতে তোলেন। এর আগে রিমান্ড শেষে গত ১৩ আগস্ট আদালতে আনা হলে অসুস্থ হয়ে পড়েন নওশাবা। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলে, নওশাবা অসুস্থ। তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। তবে চিকিৎসকের সনদে দেখা যায়, নওশাবার মেরুদণ্ডজনিত সমস্যা আছে।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য তারিখ ১ অক্টোবর পর্যন্ত নওশাবার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বহাল থাকবে।

নওশাবাকে গ্রেপ্তার করে গত ৫ আগস্ট আদালতে হাজির করে পুলিশ। সেদিন আদালত তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আরও দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। নওশাবাকে রিমান্ড নেওয়ার আবেদনে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি স্বীকার করেছেন যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ‘দুই ছাত্রের মৃত্যু এবং একজনের চোখ তুলে ফেলা’র কথা নিজের ফেসবুকে ছড়ান। এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে, তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোই নওশাবার উদ্দেশ্য ছিল।

৪ আগস্ট দুপুরের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ের কর্মীদের সংঘর্ষে জিগাতলা এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চলা সংঘর্ষে হেলমেট পরা একদল যুবককে দেখা গেছে। সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে অভিনেত্রী নওশাবা বিকেল চারটার দিকে ফেসবুক লাইভে আসেন। ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওর শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমি কাজী নওশাবা আহমেদ বলছি। আপনাদের জানাতে চাই, একটু আগে জিগাতলায় আমাদের ছোট ভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, দুজনকে মেরে ফেলা হয়েছে।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোই নওশাবার উদ্দেশ্য ছিল বলে জানিয়েছে র‍্যাব। র‍্যাবের ভাষ্য, নওশাবা স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে আসার আগে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি জিগাতলা নিয়ে কথা বলার সময় উত্তরায় ছিলেন। রুদ্র নামের এক ছেলে তাঁকে লাইভ করতে বলেন। তাই তিনি উত্তরা থেকে লাইভ করেছেন।

ফেসবুকে গুজব ছাড়ানোর অভিযোগে শনিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে নওশাবাকে আটক করে র‌্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুজব ছাড়ানোর কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে র‌্যাব বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে এ মামলা করে নওশাবাকে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।