লালপুরে বাস-লেগুনার সংঘর্ষে নিহত ১৫

সংঘর্ষের পর দুমরে মুচড়ে যায়ও লেগুনা। পাশেই খাদে পড়ে যায় সংশ্লিষ্ট বাস। লালপুর, নাটোর, ২৫ আগস্ট। ছবি: মুক্তার হোসেন
সংঘর্ষের পর দুমরে মুচড়ে যায়ও লেগুনা। পাশেই খাদে পড়ে যায় সংশ্লিষ্ট বাস। লালপুর, নাটোর, ২৫ আগস্ট। ছবি: মুক্তার হোসেন

নাটোরের লালপুর উপজেলায় বাস ও লেগুনার সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত ১১ জন আহত হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের কদিমচিলান এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা সবাই লেগুনার যাত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, দুর্ঘটনার সময় লেগুনার চালক মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। দুর্ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

বনপাড়া হাইওয়ে থানা, লালপুর থানা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের সময় লালপুরের কদিমচিলান ক্লিক মোড় এলাকায় সাদিয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে চ্যালেঞ্জার নামের নাটোরগামী একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিকে থেকে আসা যাত্রীবাহী একটি লেগুনার সংঘর্ষ হয়। এতে লেগুনাটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং বাসটি সড়কের পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে লেগুনার ১০ যাত্রী নিহত হন।

এলাকাবাসী জানান, দুর্ঘটনার পরপর তাঁরা লেগুনার চারজনসহ বাসের আহত আট যাত্রীকে উদ্ধার করেন। পরে বনপাড়া হাইওয়ে থানা, লালপুর থানা, নাটোর ও লালপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে আসেন। আহত লোকজনকে বড়াইগ্রামের বনপাড়া শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লেগুনার আরও ৫ যাত্রীর মৃত্যু হয়।

নিহত লোকজনের মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ১১ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হচ্ছেন পাবনা জেলার মুলাডুলি গ্রামের মন্টু রোজারিওর স্ত্রী আদরী বিশ্বাস (৩৬), ছেলে প্রত্যয় বিশ্বাস (১২), মেয়ে স্বপ্না বিশ্বাস (১০), ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি গ্রামের সুবহান আলী (৭৫), লেগুনার চালক (ঠাকুরগাঁ জেলায় বাড়ি) আব্দুর রহিম (৩৫), নাটোরের বড়াইগ্রামের শাপলা বেগম (২০), শেফালি বেগম (৪০), রজুফা বেগম (৪৫), লজেলা বেগম (৬৫) রোকন আলী (২২) ও সোবহান।

লেগুনার বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী নুরসেদ সর্দার (৭২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথম আলোকে বলেন, লেগুনাটি বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাসের লেগুনাস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া যাচ্ছিল। লেগুনাটি ছাড়ার পর থেকে চালক এলোমেলোভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় চালক মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মুহূর্তে সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় নুরসেদ সর্দারের স্ত্রী লজেনাও মারা গেছেন।

দুর্ঘটনাস্থলের কাছে থাকা সাদিয়া ফিলিং স্টেশনের কর্মী জাহের আলী প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার সময় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ সড়কে বিকট শব্দ হয়। তাঁরা সড়কে গিয়ে দেখেন হতাহতরা সড়কের ওপর পড়ে আছেন। ওই সময় সড়কে অন্য কোনো যানবাহন ছিল না।

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনাকবলিত বাসের চালক পলাতক। লেগুনার চালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামসুন নূর বলেন, লাশগুলো তাঁর থানায় রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে লেগুনাটির নিবন্ধন ও ফিটনেস ছিল না। বাসটি এ সড়কে নিয়মিত চলাচল করে।

নাটোর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজ্জাকুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এ দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।


বড়াইগ্রামে বাস-ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত ১
এদিকে শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজ্জাকের মোড় এলাকায় বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকের চালক নিহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ওই চালকের পরিচয় জানা যায়নি। বনপাড়ার হাইওয়ে থানার ওসি সামসুন নূর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।