নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত, চরম দুর্ভোগ

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। ফলে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে স্পিডবোট ও লঞ্চ ঘাটে। আজ সকালে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায়। ২৬ আগস্ট ২০১৮। ছবি: অজয় কুন্ডু
কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। ফলে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে স্পিডবোট ও লঞ্চ ঘাটে। আজ সকালে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায়। ২৬ আগস্ট ২০১৮। ছবি: অজয় কুন্ডু

পদ্মায় ফের নাব্যতা সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ কারণে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। আজ রোববার এই নৌপথে ১৯টি ফেরির মধ্যে থেমে থেকে স্বল্প যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে মাত্র সাতটি কে-টাইপ ও ছোট (ভিআইপি) ফেরি।

এদিকে দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাটের উভয় পাড়ে আটকা পড়েছে অন্তত এক হাজার যানবাহন। এ কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই পথে চলাচলরত ২১ জেলার যাত্রী ও চালকেরা। তবে স্বাভাবিক রয়েছে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল।

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটের যানবাহনের অনেক চাপ। রাত থেকে অনেক ছোট-বড় যানবাহন পদ্মা পারাপারের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা কী করব বুঝতে পারছি না। নাব্যতা সংকট সমাধান না হলে ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। আমরা বিষয়টির দ্রুত সমাধান দিতে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি।’

সালাম হোসেন আরও বলেন, ‘যানবাহন পারাপারে আমাদের ১৯টি ফেরির মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতিতে সাত থেকে আটটি ফেরি থেমে থেমে চলাচল করছে। এগুলো কে-টাইপ ও ছোট (ভিআইপি) ফেরি। বড় ফেরি ও ডাম্ব ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ছবি: প্রথম আলো
কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ছবি: প্রথম আলো

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, নদীর লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান থাকায় এই নৌপথে গতকাল শনিবার রাত ১১টা থেকে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পাশাপাশি বিকল্প নৌপথ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর আজ রবিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে পরীক্ষামূলকভাবে হাজারখানেক যাত্রী নিয়ে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট থেকে শিমুলিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া কিশোরী নামের একটি ফেরি লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ডুবোচরে আটকা পড়ে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় চেষ্টা করে ডুবোচরের হাত থেকে রক্ষা পেলেও ফেরিটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। এরপর মাঝপদ্মায় কিশোরী ফেরিটিকে নোঙর করে রাখা হয়।

আজ সকাল ১০টার দিকে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটের এক নম্বর ঘাটে একটি ছোট ফেরিতে স্বল্প পরিসরে ছোট যানবাহন তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি মাত্র যাত্রীবাহী বাস তোলা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য তিনটি ঘাটে কোনো ফেরিতেই যানবাহন তোলা হচ্ছে না। ঘাটের চারটি সংযোগ সড়কেই আটকা পড়েছে ছোট-বড় সব ধরনের অন্তত এক হাজার যানবাহন। ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় লঞ্চ ও স্পিডবোটের ঘাটে রয়েছে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলোতেও অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।

ঢাকাগামী যাত্রী শাহরুক আহম্মেদ বলেন, ‘ঘাটে ফেরি নেই। তাই মানুষের ভিড় সামলে লঞ্চঘাটের দিকে যাচ্ছি। লঞ্চে যে অবস্থা, মনে হয় না শান্তিতে পদ্মা পাড়ি দিতে পারব।’

লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে নাব্যতা সংকট প্রকট আকারে ধারণ করায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। রোববার সকালে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে নাব্যতা সংকট প্রকট আকারে ধারণ করায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। রোববার সকালে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকাগামী দিগন্ত পরিবহনের চালক বলেন, ‘ঘাটে গতকাল রাত একটার দিকে এসেছি। এসে শুনি ফেরি সকালের আগে চলবে না।এখন কী করব বুঝছি না। এদিকে যাত্রীরা রেগে চড়ে উঠছে। ঘাটে এসে আমরাও বিপদের মধ্যে পড়েছি।’

স্পিডবোটের ঘাটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী ইসমাইল হাসান বলেন, ‘লঞ্চে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোটেই যেতে হচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে তারপর টিকিট নিয়ে স্পিডবোট উঠতে হবে। ফেরি চলাচল ঠিক থাকলে আমাদের এই দুর্ভোগে পড়তে হতো না।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কুশল কুমার সাহা বলেন, ‘বেলা যত বাড়ছে, ঘাটে যানবাহনের চাপ ততই বাড়ছে। ফেরি চলাচলে সমস্যা থাকায় ঘাট থেকে যানবাহনের চাপ কমছে না। তবে যাত্রীবাহী পরিবহন থেকে ছোট গাড়ির চাপই বেশি। পুলিশের একাধিক সদস্য যানজট নিরসনে কাজ করছি। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক না হলে এই চাপ কোনোভাবেই কমবে না।’