ঈদের ছুটিতে বিছনাকান্দি

১৭ আগস্ট প্রথম আলো সিলেটসভার বন্ধুদের বিছনাকান্দিতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। ছবি: অসমিত নন্দী
১৭ আগস্ট প্রথম আলো সিলেটসভার বন্ধুদের বিছনাকান্দিতে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। ছবি: অসমিত নন্দী

দূরে দৃষ্টিসীমায় ধরা দেয় আবছা পাহাড়। তার গা বেয়ে নামছে জলের ধারা। অনেক উঁচুতে আকাশের কাছাকাছি পাহাড়ের গা ছুঁয়ে সাদা ধোঁয়ার দল ঘোরাঘুরি করছে। যেন কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে পাহাড়ের গভীর থেকে। নাহ্, ধোঁয়া নয়—মেঘ। বুঝতে খুব একটা দেরি হয় না। কিন্তু ততক্ষণে অদ্ভুত এক ভালোলাগায় ভরে উঠেছে হৃদয়। এমন দৃশ্য কি আর সচরাচর মেলে? মাঝে মাঝে, মানে বর্ষার মৌসুমে কদাচিৎ এমন নয়নাভিরাম রূপে দেখা দেয় বিছনাকান্দি।

অনেকবার গিয়েছি বিছনাকান্দি। কিন্তু এমন রূপ এই যাত্রায় প্রথমবার অবলোকন করলাম। ঈদে ছুটি মাত্র তিন দিনের। সংক্ষিপ্ত সময়টা পরিবারের জন্য বরাদ্দ করে রেখেছিলাম অনেক আগে থেকেই। শেষ দিনের অফিস শেষে বের হওয়ার মুখে দেখা হয়ে যায় সুমিতদার সঙ্গে। বাড়ি যাচ্ছি শুনে তিনি বললেন, ‘বাড়ি গিয়ে কী হবে। সিলেট থাকো। ঘুরে দেখো, ভালো কিছু পেয়েও যেতে পার।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘সিলেট থাকলে তোমাকে নিয়ে ঘুরব।’ দোটানায় পড়ে গেলাম। দেখা হয় বড় ভাই পুলক চন্দ্র শীলের সঙ্গে। বিষয়টা শেয়ার করি। তিনি আরও উসকে দেন। শেষটায় ‘...পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’-এর আশায় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই, বাড়িতে জানিয়ে দিই—ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছি না। ঘড়িতে সময় তখন ১১টা। মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম আমরা। চারটা মোটরসাইকেলে সাতজন আমরা, সবার ‘কাঁধেতে ঝোলানো ব্যাগ’। সবার সঙ্গেই ক্যামেরা। সাতজনের ১৪ চোখ খুঁজেই চলছে। চারদিকে থইথই পানি। ছবি তুলে তুলে বেলা ১টা ১৫ মিনিটে আমরা পৌঁছাই হাদারপাড় ঘাটে।

চারদিকে পানি, দুর্বার স্রোতের তরঙ্গ দেখার মতো। চারপাশে নীরব, শুধু ইঞ্জিনচালিত নৌকার শব্দ। দূরে দেখা মিলছে গাছপালায় ঠাসা উঁচু উঁচু পাহাড়। নুড়ি পাথরের ধাক্কা খেয়ে ঢেউ ওঠে নদীর বুকে। চলছে সবার ছবি তোলা। অবশেষে দুইটায় গন্তব্যে পোঁছাই।

যেন বরণের ডালি সাজিয়ে বসে আছে মেঘ। পৌঁছা মাত্রই আমাদের ভিজিয়ে বরণ করল। নৌকায় বসে বসে দেখলাম পাহাড় থেকে কীভাবে মেঘ আকাশে গিয়ে ঝরে পড়ে। চমৎকার এসব দৃশ্য মাতাল করে তুলবে যে কাউকে নিশ্চিত। অদ্ভুত মাদকতা মাখা পানির সুর আচ্ছন্ন করে ফেলে। মায়ায় পড়ে যাই। ফিরে আসার কোনো তাড়া অনুভব করি না। তবু ফিরতে হবে! সন্ধ্যা নেমে আসছে। আমরা ফেরার পথে, আমরা নগরের পথে। পেছনে পড়ে থাকে প্রকৃতির মায়া।

বিছনাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বিছনাকান্দি যেকোনো সময় ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। তবে বর্ষাকাল বিছনাকান্দি ভ্রমণ করলে প্রকৃতির আসল রূপ দেখা দেবে। চারদিকে প্রচুর পানিপ্রবাহ থাকার কারণে এ সময় বিছনাকান্দির প্রকৃত সৌন্দর্যের দেখা মেলে।

কীভাবে যাবেন সিলেট থেকে বিছনাকান্দি

সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে হাদারপার নামক জায়গায় যেতে হবে। অটোরিকশা রিজার্ভ নিলে সাধারণত ভাড়া এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মতো লাগবে। হাদারপার এসে নৌকাঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছনাকান্দি যেতে হবে। বিছনাকান্দি নৌকা ভাড়া নেবে এক হাজার ২৫০ টাকা। শীতকালে ও বর্ষার আগে নদীতে পানি কম থাকে সেই ক্ষেত্রে আপনি চাইলে হাদারপাড় থেকে হেঁটেও বিছনাকান্দি যেতে পারবেন। শুকনো সময়ে মোটরবাইক চলাচল করে থাকে।

বিছনাকান্দি ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

খরচ কমাতে দলগতভাবে ভ্রমণ করুন।

চাইলে এক দিনেই রাতারগুল দেখে বিছনাকান্দি ভ্রমণ করতে পারবেন।

অটোরিকশা ভাড়া করতে ভালোমতো দামাদামি করুন।

বিছনাকান্দিতে পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন।

বর্ষাকালে অল্প পানির স্রোতের গতিও অনেক বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন।


অনির্বাণ সেনগুপ্ত, অর্থ সম্পাদক, সিলেট বন্ধুসভা