দেয়ালে নতুন গ্রাফিতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর আদলে আঁকা গ্রাফিতি ‘সহমত ভাই’। সম্প্রতি রোকেয়া হলের প্রধান ফটকের পাশের দেয়ালে।  প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর আদলে আঁকা গ্রাফিতি ‘সহমত ভাই’। সম্প্রতি রোকেয়া হলের প্রধান ফটকের পাশের দেয়ালে। প্রথম আলো

বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে মেধা কতটুকু গুরুত্ব পায়, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকের মতে, সাফল্যের জন্য মেধার বদলে এখন তোষামোদিটাই মুখ্য গুণ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর চর্চাও হয় অহরহ—এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রধান গেটের পাশের দেয়ালে আঁকা এক গ্রাফিতিতে ফুটে উঠেছিল সেই চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর আদলে তৈরি করা একটি গ্রাফিতি; যাতে লেখা ‘সহমত ভাই’। আর প্রতিষ্ঠানের নামের জায়গায় লেখা ‘মেশিন’।

‘সহমত ভাই’ কথাটি বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বেশ পরিচিত। ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা না করে বিনা শর্তে কারও কথা মেনে নেওয়া বোঝাতে এটি ব্যবহার করছেন অনেকে। আবার ট্রল করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে কথাটি। আছে পেজও। যেগুলোর ‘ডেসক্রিপশন’ (বর্ণনা)-এর জায়গায় লেখা ‘সহমত ভাই সবচেয়ে পাওয়ারফুল নেতা’। এগুলোর পোস্টও ব্যঙ্গাত্মক। একটি পোস্টে দেখা যায়, ফিলিং স্টেশনের ছবি। এক ব্যক্তি বলছেন, ‘তেল দে তো...’। অপর ব্যক্তির উত্তর, ‘সহমত ভাই...রাজপথ ছাড়ি নাই, আপনার আদর্শ ভুলি নাই...’। আগের ব্যক্তি বলছেন, ‘আরে ভাই আমারে না, বাইকে তেল দে...’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোতে প্রজ্বলিত বাতির ওপর লেখা আছে ‘শিক্ষাই আলো’। তার নিচে এক পাশে আছে শাপলা ফুল, আর অন্য পাশে বাংলা স্বরবর্ণের ‘অ’। মূল লোগোর নিচের স্তরে লেখা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। গ্রাফিতিতে ‘শিক্ষাই আলো’র জায়গায় লেখা হয় ‘সহমত’। নিচের শাপলা ফুল আর ‘অ’ বর্ণের জায়গায় লেখা হয় ‘ভাই’। নিচের স্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় লেখা হয় ‘মেশিন’।

রোববার থেকে রোকেয়া হলের দেয়ালে গ্রাফিতিটি দেখা যায়। তবে মঙ্গলবার সেটি মুছে ফেলে বিশ্বিবদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গ্রাফিতিটি মুছে ফেলা সম্পর্কে তিনি জানেন না। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেয়াল রং করার কাজ চলছে। কে বা কারা গ্রাফিতি এঁকেছিল জানা যায়নি। ফেসবুকে গ্রাফিতির ছবি পোস্ট করে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিচ্ছবি এটি।’

রোববার গ্রাফিতি আঁকা দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে এক ছাত্র বলছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এখন আগের মতো জ্ঞানচর্চার জায়গায় নেই। এখন রাজনীতির চর্চাটাই বেশি। আর রাজনীতি করতে গিয়েই ছাত্র কিংবা শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তোষামোদের চর্চা বেড়ে গেছে। কারও মনোরঞ্জন বা দৃষ্টি আকর্ষণ কিংবা কমিটিতে একটি পদ পাওয়ার জন্য তোষামোদ করা হয়। তোষামোদির চর্চা করতে করতে এখন এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতিই হয়ে গেছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন সেটির কারখানা বা মেশিনের ভূমিকা পালন করছে।