প্রতিবন্ধী নারীর পরিচয় মিলেছে

টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের বাসস্ট্যান্ডে পরিবহনশ্রমিক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী নারী বাসযাত্রীর পরিচয় পাওয়া গেছে। স্বজনেরা টাঙ্গাইল কারাগারে এসে নিরাপত্তা হেফাজতে তাঁর সঙ্গে আজ রোববার সকালে দেখা করেছেন। তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন স্বজনেরা।

ওই নারীর ভাই ও বড় ভগ্নিপতি জানান, গত ঈদের ২০ দিন আগে তিনি (ধর্ষণের শিকার নারী) কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় তাঁর বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ঈদের আগে থেকেই বাড়ি চলে যেতে চাচ্ছিলেন। ঈদের পরদিন কাউকে না বলে বোনের বাসা থেকে চলে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে পরে তাঁর বোন বাদী হয়ে ঢাকার সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। শনিবার টাঙ্গাইল থেকে পুলিশের বার্তা পেয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার পুলিশ তাঁদের বাড়িতে গিয়ে খবর দেয়। খবর পেয়ে শনিবার রাতেই তাঁরা বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানায় চলে আসেন। সেখানে ছবি দেখে ওই নারীকে শনাক্ত করেন। পরে রোববার সকালে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ঢাকার একটি হাউজিং কোম্পানিতে নিরাপত্তা প্রহরী পদে চাকরিরত ওই নারীর ভাই জানান, তিনি তাঁর বোনকে নিরাপত্তা হেফাজত থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যাবেন। এ জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে বোনের ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তির জন্য আইনি লড়াই করবেন।
তাঁদের আইনজীবী শাহিন সিদ্দিকী জানান, ওই নারীকে তাঁর ভাইয়ের হেফাজতে দেওয়ার জন্য সোমবার টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে আবেদন জানানো হবে। এ জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে টহলরত পুলিশের দল ওই এলাকার নৈশপ্রহরীর মাধ্যমে জানতে পারে, বাসস্ট্যান্ডে একটি বাসের ভেতর নারীর কান্না শোনা যাচ্ছে। এ খবর পেয়ে ওই টহল দল বাসটিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী এক নারীকে উদ্ধার করে। এ সময় ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ ওই বাসের চালকের সহকারী নাজমুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন (শুক্রবার) উপপরিদর্শক নুরে আলম বাদী হয়ে বাসের চালক আলম খন্দকার ও আটক নাজমুলকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় চালক আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে ওই নারীকে ধর্ষণ এবং সহকারী নাজমুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নাজমুলকে ওই মামলায় টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। সিনিয়র বিচারিক হাকিম মো. আশিকুজ্জামান তাঁর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ শেষে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। জবানবন্দিতে নাজমুল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর ওই নারী টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনাল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুগামী বাসটিতে ওঠেন। পথিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অন্য সব যাত্রীরা নেমে যায়। সেতুর পূর্ব প্রান্তের বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার পর ওই নারীকে একা পেয়ে চালক আলম খন্দকার ধর্ষণ করেন। এ সময় নাজমুল বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দেন।
শনিবার ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে আদালতে হাজির করে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে গাজীপুরের পুবাইলে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।