টেকনাফের পাহাড়ে গলাকাটা অবস্থায় ৩ রোহিঙ্গা, ৩ জন নিখোঁজ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার একটি পাহাড় থেকে গলাকাটা অবস্থায় আহত তিন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁদের সঙ্গী আরও তিন রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। কাজ দেওয়ার নাম করে ছয় রোহিঙ্গাকে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।

টেকনাফ পুলিশ জানায়, উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমারকুল আশ্রয়শিবিরের পাশের পাহাড় থেকে আজ সোমবার সকালে গলাকাটা অবস্থায় তিনজন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁদের গলা কেটে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উদ্ধার করা তিনজনের মধ্যে দুজনের নামের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই দুজন অল্পস্বল্প কথা বলতে পারছেন। তাঁরা হলেন মো. আলম (৪৫) ও আবদুল খালেক (২৩)। আহত আরেকজন কথা বলতে পারছেন না। তাঁর নাম মো. আনোয়ার (৩৩) বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিৎ কুমার বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ থানার পুলিশ চাকমারকুল আশ্রয়শিবিরের পাশের পাহাড়ি জঙ্গল থেকে গলাকাটা অবস্থায় তিন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে। তাঁদের দ্রুত স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে বেলা ১১টার দিকে তিন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত তিনজনের মধ্যে দুজন কিছুটা কথা বলতে পারলেও তৃতীয়জন একেবারেই কথা বলতে পারছেন না। তাঁর কণ্ঠনালি কেটে গেছে।

ওসি জানান, আহত তিনজন উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা।

পুলিশ মনে করছে, মুক্তিপণের জন্য ছয়জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করা হয়েছিল। এর আগেও রোহিঙ্গা ও স্থানীয় লোকজন মিলে মাদক পাচার, অপহরণসহ নানান ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। গত এক বছরে উখিয়া ও টেকনাফ আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের হাতে ১৯ জন রোহিঙ্গা খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত মাসে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালককে কয়েকজন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা মিলে অটোরিকশাসহ পাহাড়ে আটক রেখে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে পুলিশ ওই চালককে উদ্ধার করে।

ওসি রণজিৎ কুমার বড়ুয়া জানান, অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, শ্রমিক হিসেবে কাজ দেওয়ার কথা বলে উখিয়ার বালুখালী শিবিরের ছয় রোহিঙ্গাকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে তুলে নেওয়া হয়। তাঁদের প্রথমে টেকনাফের হোইয়াক্যং এলাকার চাকমারকুল আশ্রয়শিবিরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাঁদের নেওয়া হয় পাশের পাহাড়ের জঙ্গলে।

ওসি বলেন, সম্ভবত মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ভয় দেখাতে তিন রোহিঙ্গার গলা অল্প করে কাটা হয়েছিল। হত্যার পরিকল্পনা থাকলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতো। নিখোঁজ অপর তিনজন রোহিঙ্গাকে উদ্ধারে পাহাড়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে। তিনি মনে করেন, এই ঘটনার পেছনেও রোহিঙ্গারাই রয়েছে। এ সময় তিনি গত এক বছরে উখিয়া ও টেকনাফ আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের হাতে ১৯ জন রোহিঙ্গা হত্যার তথ্য তুলে ধরেন।