পুলিশের গাড়িরই ফিটনেস নেই
নিরাপদ সড়কসহ নয় দফা দাবি আদায়ে সম্প্রতি সারা দেশে রাস্তায় নেমেছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। অব্যাহত আন্দোলনের মুখে সরকারও সব দাবি মেনে নেয়। এসব দাবির মধ্যে আছে সড়কে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ করা। অথচ গাজীপুরে পুলিশই চালাচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি।
গত ১৬ আগস্ট টঙ্গীর এরশাদনগর পদচারী-সেতুর নিচে দেখা যায়, একটি লক্কড়ঝক্কড় গাড়িতে টহল দিচ্ছেন টঙ্গী থানার চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য। গাড়িটির রং নষ্ট হয়ে গেছে। সামনের দুটি হেডলাইট আছে, কিন্তু ডানে-বাঁয়ে মোড় নির্দেশক বাতি নেই। ইঞ্জিনের সামনের অংশ ভাঙা। কয়েক জায়গায় তার দিয়ে বাঁধা। কিছু অংশে ঝালাই দেওয়া। চলছে খুব ধীরগতিতে। সামনের দুই দরজাও নড়বড়ে। চালক জানান, গাড়িটি ২০ থেকে ২৫ বছরের পুরোনো। মাঝেমধ্যেই পথে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তখন ধাক্কা দিয়ে চালু করতে হয়। টহলের নেতৃত্বে থাকা পুলিশের এক উপপরিদর্শক বলেন, ‘গাড়ির ফিটনেস নেই, আমরাও জানি। কিন্তু কিছু করার নাই। থানা থেকে যে গাড়ি দেবে, তাতেই ডিউটি করতে বাধ্য আমরা।’
একই চিত্র জয়দেবপুর থানার। ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, এখানে মোট চারটি গাড়ি আছে। একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি)। বাকি তিনটি টহলের। তিনটিই পুরোনো। কাগজপত্রের ঠিক নেই। শামিম নামের এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সবগুলাই ১৯৮০ সালের গাড়ি। ফিটনেস নাই। কাগজপত্র আর কী ঠিক থাকব। বেশির ভাগ সময়ই নষ্ট থাকে। তখন বাইরে থেকে গাড়ি নিয়া ডিউটিতে যেতে হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জয়দেবপুর থানাধীন ১০টি পয়েন্টে মোট আটটি টহল দল কাজ করে। এর মধ্যে জয়দেবপুর থানার নিজস্ব গাড়ি আছে তিনটি। আর রিকুইজিশন করে আনতে হয় আরও পাঁচ-ছয়টি গাড়ি। আবার টঙ্গী থানা থেকে দিনে চারটি এবং রাতে নয়টি টহল দল কাজ করে। তাদের নিজেদের গাড়ি আছে দুটি। রিকুইজিশন করে আনতে হয় আরও ছয়-সাতটি।
গত কয়েক দিন দুই থানায় চোখ রেখে দেখা যায়, রিকুইজিশনের জন্য যেসব গাড়ি আনা হয়, তার সবটাই লেগুনা। ২৫-৩০ বছরের পুরোনো মাইক্রোবাস কেটে বানানো। ফিটনেস নেই।
২৯ আগস্ট জয়দেবপুর থানা চত্বরে দেখা যায়, মো. আলী নামের এক পুলিশ সদস্য টহলের জন্য একে একে চার-পাঁচটি লেগুনা নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে একটি লেগুনার চালক মো. শাজাহান। বয়স ১৭ বছর। সেই গাড়ির চাকার নাট ভাঙা ও টিউব ফাটা। সে ডিউটিতে না যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ সদস্য মানতে নারাজ। যেমন অবস্থায় আছে, তা দিয়েই ডিউটিতে যেতে হবে বলে জানান তিনি। শাজাহান বলে, ‘চাকা পাল্টাইতে আধা ঘণ্টা সময় চাইছি। তাও দেয় নাই। জোর করে নিয়া আইছে।’ মো. আলী বলেন, ‘ওরা ডিউটিতে না যাওয়ার জন্য এসব বলতাছে। কিছুক্ষণ আগেও ট্রিপ মারছে।’
লেগুনার একজন চালক বলেন, ‘থানায় যে গাড়িগুলো দেওয়া হয়, তার প্রতিটিতেই কোনো না কোনো সমস্যা আছে। সবগুলা গাড়িই ঝুঁকিপূর্ণ। গাড়ির নম্বর আছে ঠিকই। কিন্তু ১৫-২০ বছরের ডেট ফেল।’
গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র এএসপি সালেহ আহমেদ বলেন, একটি ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিজেদের জন্য যেমন বিপজ্জনক, তেমনি পথচারী ও অন্যান্য যানবাহনের জন্য ভয়ের কারণ। সে জন্য যেকোনো গাড়ির ফিটনেস থাকাটা জরুরি।
জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এটা শুধু আমাদের সমস্যা না। প্রতিটি থানাতেই এ ধরনের সমস্যা আছে। আমরা মাসিক কল্যাণ প্যারেডের মাধ্যমে পুলিশ সুপার মহোদয়কে বিষয়গুলো বারবার জানিয়েছি।’
গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, ‘আমাদের গাড়ির সংকট আছে, এটা সত্য। এর মানে এই না যে কেউ ফিটনেসবিহীন গাড়ি ব্যবহার করে ডিউটি করবে। আমি প্রতিটি থানার ওসির সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’