'অভিভাবকহীন' এক মাঠ

বিস্তীর্ণ মাঠে নেই সবুজের চিহ্ন। উড়ছে ধুলো। এর মধ্যে চলছে খেলাধুলা। গত মঙ্গলবার মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের হারুন মোল্লাহ ঈদগাহ, খেলার মাঠ ও পার্কে।  ছবি: প্রথম আলো
বিস্তীর্ণ মাঠে নেই সবুজের চিহ্ন। উড়ছে ধুলো। এর মধ্যে চলছে খেলাধুলা। গত মঙ্গলবার মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের হারুন মোল্লাহ ঈদগাহ, খেলার মাঠ ও পার্কে। ছবি: প্রথম আলো

প্রায় আড়াই একর আয়তনের খেলার মাঠ। তাতে সবুজ ঘাসের চিহ্ন বলতে কিছু নেই। মাঠজুড়ে বালু। এর মধ্যেই সকাল-বিকেল খেলাধুলা করে স্থানীয় বাসিন্দারা। আর রাত নামলে মাঠে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। এই চিত্র মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের হারুন মোল্লাহ ঈদগাহ, খেলার মাঠ ও পার্কের।

স্থানীয় লোকজন, মাঠের মালিক জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এর দেখভাল করে না। এ কারণে মাঠের এই হাল হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, মাঠের পশ্চিমাংশে নির্মাণ করা হয়েছে পানির পাম্প। এতে কমে গেছে মাঠের আয়তন। বাতাসে উড়ছে ধুলো। তার মধ্যেই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ বিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী খেলছে ফুটবল। তারা বলল, ঢাকায় খেলার মাঠের বড্ড অভাব। সেখানে এত বড় খেলার মাঠ পাওয়ায় নিজেদের ভাগ্যবান মনে হয়। কিন্তু মাঠে ঘাস না থাকায় তাদের খেলাধুলায় অসুবিধা হয়।

এ ব্লকের তিন ও চার নম্বর সড়কের মধ্যবর্তী জায়গায় খেলার মাঠটির অবস্থান। এই দুটি সড়কেই অবৈধভাবে বাস পার্ক করে রাখতে দেখা গেছে। ৩ নম্বর সড়কের শুরুতেই মাঠ ঘেঁষে রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। এসব আবর্জনা ট্রাকে তুলতে দেখা যায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোহাম্মদ সাগরকে। তিনি বলেন, ‘এর আগে পরপর তিন দিন ট্রাক নিয়ে এসেও আমরা ময়লা নিতে পারিনি। রাস্তার দুই সারিতে এমনভাবে বাস রাখা ছিল যে ট্রাক ঢুকতে পারেনি।’ স্থানীয় লোকজন বলেন, মাঠের নির্মল পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার পেছনে দুই সড়কে বাসের অবৈধ পার্কিং প্রধান কারণ। দিনের বেলা সড়কেই চলে মোটরযান সারাইয়ের কাজ। আর রাত নামলেই এসব বাস ঘিরে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা।

অবৈধ পার্কিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বাসমালিক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মিরপুর ১২ হলো শেষ স্টপেজ। কিন্তু এখানে কোনো টার্মিনাল নেই। তাই আমরা এক প্রকার নিরুপায় হয়ে সড়কেই বাস রাখছি। সরকারিভাবে টার্মিনাল নির্মাণ করে দেওয়া হলে এই সমস্যা থাকবে না।’

মাঠের পূর্বাংশে স্থানীয় বর্ণ ক্রিকেট একাডেমি নিজেদের উদ্যোগে পিচ তৈরি করে নিয়েছে। সেখানে সকাল-বিকেল অনুশীলন করেন জনা পঞ্চাশেক তরুণ ক্রিকেটার। কথা হয় বর্ণ ক্রিকেট একাডেমির কোচ রনি হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পুরো মিরপুর ১২ নম্বরে খেলাধুলার নিবিড় চর্চা হয়। এ ক্ষেত্রে এ মাঠটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু দেখেন, মাঠটি দেখভালে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। যেকোনো মাঠের প্রধান শর্ত সবুজ ঘাস। কিন্তু এখানে ঘাস নেই। শরীর চর্চার সরঞ্জামের কথা বাদই দিলাম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মিরপুর গৃহসংস্থান বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল্লাহেল বাকি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৭-০৮ সালের দিকে মিরপুরের বেশ কিছু মাঠের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। ওই মাঠটি দেওয়া হয়েছিল কি না, তা এ মুহূর্তে জানা নেই। কাগজ দেখে বলতে হবে।

তবে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেল) তারিক বিন ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, মাঠটি এখনো গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মালিকানায় আছে। সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়নি। তাই মাঠ রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি তাদেরই দেখার কথা।