ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষেই ছাত্রদের বসবাস

ছাদ থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। কোথাও ফাটল তৈরি হয়েছে। ফজলে রাব্বি হলের ৩৩৫ নম্বর কক্ষ।  ছবি: প্রথম আলো
ছাদ থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। কোথাও ফাটল তৈরি হয়েছে। ফজলে রাব্বি হলের ৩৩৫ নম্বর কক্ষ। ছবি: প্রথম আলো
>
  • ঢাকা মেডিকেলের ফজলে রাব্বি হল
  • হল কর্তৃপক্ষ চারতলা ভবনের আটটি কক্ষকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে।
  • কিন্তু ভবনটি প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি।

কোথাও কোথাও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে, কোথাও আবার খসে পড়তে পারে যেকোনো মুহূর্তে। ছাদের যে অংশে সিলিং ফ্যান লাগানো, সেখানেও ভয়াবহ অবস্থা। যে রড দিয়ে ফ্যানটি ছাদের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, সেটির চারপাশের সিমেন্ট খসে পড়েছে। তাতে বেরিয়ে আসা রডটাও জরাজীর্ণ। ফ্যান ঘুরছে বিকট শব্দে। তার নিচেই বিছানায় ঘুমাচ্ছিলেন ১০-১২ জন শিক্ষার্থী।

এই চিত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. ফজলে রাব্বি হলের ৩৩৫ নম্বর কক্ষের। এই কক্ষসহ মোট আটটি কক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে হল প্রশাসন। কিন্তু ছাত্রদের বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে থাকতে হচ্ছে শখানেক ছাত্রকে।

এমন পরিবেশের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্লাস থেকে ফিরে শুয়ে ছিলেন এক শিক্ষার্থী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্র বলেন, ‘কক্ষের এমন জরাজীর্ণ অবস্থা দীর্ঘদিনের। দিনে দিনে সেটি আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকতে হয়—কখন যে ছাদটাই ধসে পড়ে।’

১৯৬০ সালে নির্মিত চারতলা এই ছাত্রাবাসে কক্ষ আছে ২২৫টি। বসবাস করেন প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী। ভবনের চতুর্থ তলার দক্ষিণ অংশে কক্ষগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সেখানে প্রায় ৩০টি কক্ষের ছাদ ও দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। ফাটলও দেখা দিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, অন্যান্য কক্ষে থাকার জায়গা ফাঁকা নেই। অধিকাংশ কক্ষেই সাবেক হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা থাকেন। তাই তাঁরা সেসব কক্ষে স্থানান্তরিত হতে পারছেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, চতুর্থ তলার আটটি কক্ষকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে দরজায় বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। কক্ষগুলোর ভেতরের ছাদ ও দেয়াল থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। ছাদের চৌবাচ্চা থেকে দেয়াল বেয়ে পানি পড়ায় শেওলাও জমেছে কোথাও কোথাও। প্রতিটি কক্ষে থাকছেন ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী। কক্ষের বাইরে বারান্দার সিমেন্টের রেলিংয়েও ফাটল দেখা দিয়েছে। মূল ভবনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশকে যুক্ত করা সেতুতেও ফাটল ধরেছে। খসে পড়েছে পলেস্তারা।

৩২২ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, পলিথিন দিয়ে শামিয়ানা টানিয়ে ছাদ ঢেকে রাখা হয়েছে। সেই শামিয়ানাতেও জমে আছে খসে পড়া পলেস্তারার ভাঙা অংশ। কক্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, সারাদিনই ছাদের সিমেন্ট খসে পড়ে। বালু পড়ে বিছানা ময়লা হয়ে যায়। সে জন্য ছাদে শামিয়ানা টানানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাদে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি চৌবাচ্চা আছে। সেটিও হলের মতোই অনেক পুরোনো। সেখান থেকে পানি দেয়াল বেয়ে পড়তে পড়তে দেয়ালের সিমেন্টও উঠে যাচ্ছে।

৩৩১ নম্বর কক্ষের নুরুজ্জামান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিদিনই ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটছেই। দেয়াল ও ছাদে নতুন নতুন ফাটলও দেখা দিচ্ছে।

হল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে মূল ভবনের ৩২২, ৩২৮, ৩২৯, ৩৩০, ৩৩১, ৩৩৩, ৩৩৪ ও ৩৩৫ নম্বর কক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে একটি বিজ্ঞাপ্তি টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে কক্ষগুলোর দরজায়। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে, ফজলে রাব্বি হলের সংস্কার ও সুরক্ষা কমিটি কর্তৃক উক্ত রুমগুলোকে বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে। সে মোতাবেক রুমগুলোকে সিলগালা করে ছাত্রদের জরুরি ভিত্তিতে অন্য কক্ষে স্থানান্তরে নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

শিক্ষার্থীদের স্থানান্তরের বিষয়ে কথা বলার জন্য উপাধ্যক্ষ শফিকুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শনিবার অফিসে আসেন। এ বিষয়ে তখন কথা হবে।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, কিছুদিন আগে হল কর্তৃপক্ষ কোন কোন কক্ষে পলেস্তারা ও ফাটল দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে তাদের জানানোর জন্য দরখাস্ত দিতে বলেন। চতুর্থ তলায় ৩০টির বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষ আছে। কিন্তু হল কর্তৃপক্ষ শুধু আটটি কক্ষকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

হল কর্তৃপক্ষের চিহ্নিত কক্ষগুলোর বাইরে ৩১৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালের পলেস্তারা খসে রড বের হয়েছে। ছাদেরও একই অবস্থা। পলেস্তারা খসে পড়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে কক্ষের এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, ‘বিছানা ও টেবিল পরিষ্কার করে সকালে ক্লাসে গিয়েছিলাম। দুপুরে এসে দেখি, ছাদ থেকে খসে পড়া সিমেন্ট বালু দিয়ে সব নোংরা হয়ে গেছে।’

হলের ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষগুলো সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকৌশল বিভাগ থেকে কক্ষগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ই-টেন্ডার হয়ে গেলেই সংস্কারকাজ শুরু হবে। সাবেকদের কক্ষ দখল করে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু শিক্ষার্থীর ইন্টার্ন থাকায় তারা এখনো কক্ষগুলোতে আছে। হলের সুপারকে নিয়ে করা একটি কমিটিকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে কক্ষগুলো খালি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তখন ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষগুলোর শিক্ষার্থীদের সেখানে স্থানান্তরিত করা সম্ভব হবে।’