মাদকের তালিকায় ইয়াবা, ছয় অপরাধে মৃত্যুদণ্ড

>

• মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন সংশোধন
• মাদকের অর্থ সরবরাহকারী, বিনিয়োগকারী, পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা, সহায়তাকারী ও প্ররোচনাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি।

মাদক কেনাবেচায় অর্থ সরবরাহকারী, বিনিয়োগকারী, পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা, সহায়তাকারী ও প্ররোচনাকারী-এই ছয় ধরনের অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে সরকার। প্রায় দুই বছর আলাপ-আলোচনার পর অনুমোদনের জন্য আইনটি গত সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এটি জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে পাস হতে পারে।

দেশব্যাপী মাদকবিরোধী চলমান অভিযানে গত ১১৫ দিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ২১৩ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১০৪ জন ও র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৭১ জন নিহত হয়েছেন। বাকি ৩৮ জন মাদক ব্যবসায়ী দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ বলছে, একদিকে দেশজুড়ে হাজার হাজার মাদকের মামলা রয়েছে, অন্যদিকে এসব মামলায় আসামিদের সাজা নিশ্চিত করা অনেক ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব। এই প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত আইনে মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য জেলা বা মহানগরে এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল করার বিধান রয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, নেপথ্যে যারা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের আইনের আওতায় আনতে এসব ধারা সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমান আইনে অর্থ জোগানদাতা বা মদদদাতারা পার পেয়ে যাচ্ছে। এখন কেউ অর্থ বিনিয়োগ করলে, সরবরাহ করলে বা মদদ দিলে, তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

এ আইনে মাদকসংক্রান্ত অপরাধ তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে। সংস্থার মহাপরিচালক তদন্ত ও তদারক কর্মকর্তাকে নিয়োগ ও বদলি করতে পারবেন। তবে আইন অনুযায়ী যদি কোনো কর্মকর্তা সন্দেহ করার কোনো কারণ না থাকার পরও তল্লাশি করেন বা তল্লাশির নামে কোনো ব্যক্তির সম্পদ আটক করেন বা তাকে গ্রেপ্তার করেন, তবে তিনিও কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯০ সালের মাদক আইনের ৭৫ শতাংশ পরিবর্তন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ করা হয়। মাদক অপরাধের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করতে কিছু অপরাধ ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হয়েছে। পুরোনো আইনে হেরোইন, পেথেডিন, মরফিন, কোকেনসহ আরও কিছু মাদকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। এই সময়ের মধ্যে মাদকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইয়াবা। ইয়াবা কেনাবেচায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন যা যুক্ত হলো
প্রস্তাবিত আইনে ৩৮টি সংজ্ঞা রয়েছে, যার মধ্যে ১৮টি নতুন সংজ্ঞা। মাদকসংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ধরন বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য সেবন করে কেউ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জনগণের শান্তি নষ্ট করলে বা একই অপরাধ তিনবার করলে, তার সাজা হবে। আইনে না থাকলেও নতুন যেকোনো ধরনের মাদকদ্রব্য আবিষ্কৃত হলেই তা আইনের আওতায় আসবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে মাদকের সব অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতে হতো না। প্রস্তাবিত আইনে অপরাধের লঘু-গুরু বিভাজন ও পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে দণ্ডের পুনর্বিন্যাসসহ সব ধরনের মাদকের ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এখতিয়ার সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

সিসা বারের অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম নৈতিক অবক্ষয়সহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সে জন্য আইনে অ্যালকোহল ব্যতীত অন্যান্য মাদকদ্রব্য বা মাদকদ্রব্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিধিনিষেধ
ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তিনি লাইসেন্স বা পারমিট পাবেন না। মহাপরিচালকের অনুমোদন ছাড়া লাইসেন্স পাওয়া কোনো মদের দোকান বা বার বন্ধ করা যাবে না। সরকার কারাগার, হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। যানবাহনে মালিকের অনুপস্থিতিতে মাদক বহন করলে চালক দায়ী থাকবেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কেউ মাদক রাখা বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজের বাড়িঘর, জায়গাজমি, যানবাহন, যন্ত্রপাতি বা কোনো অর্থ বা সম্পদ ব্যবহার করেন, তবে তিনিও শাস্তির আওতায় আসবেন।

প্রস্তাবিত আইনের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নতুন আইনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যখন যে মাদক বাজারে আসবে, সেই মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের চাকরিপ্রার্থী মাদকসেবী কি না, তা পরীক্ষার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।