মধ্যরাতে উপাচার্যের ক্লাস, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

মাঝরাতে ক্লাস নেওয়া বন্ধের দাবিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন গতকাল রোববার রাতে ঘেরাও করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেছেন, এভাবে রাতে ক্লাস নিলে নিরাপত্তাহীনতায় তাঁদের চলাচলে অসুবিধা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস নেন উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ক্লাস শেষ হয় রাত ১২টার দিকে। গতকাল রাতে ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পর একজন শিক্ষার্থী ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন—এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়। ক্যাম্পাসের দুই হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। একপর্যায়ে মিছিলটি উপাচার্যের ভবন ঘেরাও করে। এ সময় উপাচার্য সেখানেই ছিলেন। পরে প্রক্টরসহ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা মধ্যরাত পর্যন্ত ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ তুলে উপাচার্যবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।

মধ্যরাতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের উপাচার্যের ক্লাস নেওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে ক্লাস নেওয়ার পর কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’


এভাবে মধ্যরাতে ক্লাস নেওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাস থেকে মেস ও হলে যাওয়ার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি তিনি। রাতে এভাবে ক্লাস নেওয়ার নিয়ম আছে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কখন ক্লাস নিতে হবে বিধিমালায় তা স্পষ্ট বলা নেই।

গত রাতের ক্লাসে ছিলেন—রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এমন শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য প্রায় সময়ই মধ্যরাতে ক্লাস নেন। এতে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন। বিভিন্ন সময় নানা অঘটনের ঘটনাও ঘটে থাকে। এ ছাড়া পরীক্ষায় নম্বর কম কিংবা ফেল করার ভয়ে শিক্ষার্থীরা কেউ কিছু বলতে চান না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্রী বলেন, এত রাতে ক্লাস হওয়ার পর মেসে যেতে খুব ভয় হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে নিয়োজিত উপপরিদর্শক (এসআই) মমতাজুল হক রাতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবর শোনার পরপরই ফোর্স নিয়ে ভিসি স্যারের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিই। এরপর বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। রাত দুইটার দিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবস্থান থেকে চলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।’

রাতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভিসি স্যার বলেছেন, যদি শিক্ষার্থীরা রাতে ক্লাস করতে না চান, তাহলে নেওয়া হবে না।

রাতের বেলা ক্লাস নেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গাড়িতে করে পাঠানো হয়।

রাতে ক্লাস নেওয়া এবং গতকালের ঘটনার বিষয়ে জানতে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোন আজ সোমবার সকালে একাধিকবার ফোন করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।