রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থা না নিতে আমীর খসরুর আবেদন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দ্বিতীয় দফা তলবেও হাজির হননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সংস্থাটির কাছে আইনজীবীর মাধ্যমে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে অনুরোধ জানিয়েছেন উচ্চ আদালতে করা রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না নিতে।

দুদক সূত্র জানায়, আজ সোমবার তাঁকে দুদকে হাজির হতে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকে চিঠি পাঠান।

চিঠিতে বলা হয়, রিট মামলাটি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও আহমেদ সোহেলের বেঞ্চে শুনানির জন্য দেওয়া আছে। আজ রিটটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আছে (ক্রমিক নম্বর ৩২)।

প্রসঙ্গত, দুদকের তলবকে চ্যালেঞ্জ করে গত সোমবার হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আমীর খসরু। বুধবার ওই রিটের শুনানির কথা থাকলেও বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই দিন আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। ওই দিন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমীর খসরুর আইনজীবীর আবেদনে আদালত বিষয়টি আউট অব লিস্ট করেছেন। তাঁরা এখন অন্য বেঞ্চে এ আবেদন নিয়ে যেতে পারবেন।’ তারপর রিটটি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও আহমেদ সোহেলের বেঞ্চে শুনানির জন্য জমা দেওয়া হয়।

দুদক সূত্র জানায়, গত ১৩ আগস্ট সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়।

১৬ আগস্ট দুদকের পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি আমীর খসরুর চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়। ২৮ আগস্ট তাঁর হাজির হওয়ার তারিখ ছিল।

চিঠিতে বলা হয়, বেনামে পাঁচ তারকা হোটেল ব্যবসা, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনসহ মানিলন্ডারিং করে বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ নিজ নামে শেয়ার কেনাসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

পরে আমীর খসরুর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ১০ সেপ্টেম্বর হাজির হওয়ার সময় দেওয়া হয়।

এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয় চট্টগ্রামে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন। ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রে নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশে তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ক্লিপে কুমিল্লা থেকে নওমী নামের এক কর্মীর সঙ্গে একজনকে কথা বলতে শোনা যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে লোকজনকে নামানোর জন্য কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে বিএনপির শীর্ষ আট নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেনসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে বলে দুদক বলেছে।

এপ্রিলে বিএনপির যেসব নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তাঁরা হলেন স্থায়ী কমিটির চার সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাস; দুই ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও এম মোর্শেদ খান; যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এ ছাড়া এম মোর্শেদ খানের ছেলে খান ফয়সাল মোর্শেদ খানের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান হচ্ছে।

দুদকের মামলায় সাজা পেয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া বিএনপির ২৫ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধেও দুদকের করা দুর্নীতির মামলা চলছে। দলটি দীর্ঘদিন ধরেই দুদকের সমালোচনায় মুখর। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ আরেক নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামল দুদক।