সুরভিত ঝুমকোলতা ফুল

নীল ঝুমকোলতা ফুল। ঢাকায় জাতীয় বৃক্ষমেলা থেকে তোলা।  ছবি: লেখক
নীল ঝুমকোলতা ফুল। ঢাকায় জাতীয় বৃক্ষমেলা থেকে তোলা। ছবি: লেখক

ঝুমকোলতা ফুলের পোশাকি নাম শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী। এমন সুন্দর একটা ফুলের এমন বিকট নাম কী করে হলো, সেটাই ভাবছি। কিন্তু ভালো করে ফুলটাকে দেখে ভেঙে ভেঙে নামের অর্থ করে বুঝলাম, নামটা একেবারে অযথার্থ নয়।

ঝুমকোলতা ফুলের যেটা গর্ভাশয়, সেটার আকৃতি শঙ্খের মতো, ফুলের পাপড়িগুলো চারদিকে সূর্যের রশ্মির মতো ছড়িয়ে একটা চক্র রচনা করেছে। তিনটি স্ত্রীকেশরের মাথা অবিকল গদার মতো আর ফুলের বৃতিগুলো যেন পদ্মফুলের পাপড়ির মতো নিজেদের মেলে ধরেছে। অর্থাৎ ঝুমকোলতা ফুলের সব অংশই এর পোশাকি নাম ধারণ করে। উপরি পাওনা হলো এর মিষ্টি সৌরভ। যেখানে এ ফুল ফোটে, সেখানে ফুলের চেহারা দেখা না গেলেও এর সৌরভ ফুল ফোটার খবর জানিয়ে দেয়।

ঝুমকোলতা ফুল নিয়ে খ্রিষ্ট ও হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পৃথক মিথ আছে। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের স্প্যানিশ খ্রিষ্টান মিশনারিরা ঝুমকোলতাগাছের বিভিন্ন অংশকে বর্ণনা করেছিলেন যিশুখ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার নানা প্রতীক হিসেবে। ভারতের কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশের হিন্দুধর্মাবলম্বীরা এ ফুলের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ ও পঞ্চপাণ্ডবদের মিল খুঁজে পান।

ঝুমকোলতা ফুলের ইংরেজি নাম প্যাশন ফ্লাওয়ার বা প্যাশন ভিনস। নামটা এসেছে প্যাশন শব্দ থেকে, যার অর্থ প্রেম, ঘৃণা বা ক্রোধের তীব্র অনুভূতি। এই শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর যন্ত্রণাভোগ ও মৃত্যুর কষ্ট। বেদনার রং তো নীলই হয়। তাই এ ফুলের বাংলা নাম ঝুমকোলতা হলেও তা আসলে নীল ঝুমকোলতা। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম passiflora caerulea ও পরিবার প্যাসিফ্লোরেসি।

এই ফুলের গাছ লতানো স্বভাবের চিরসবুজ। গাছ একবার লাগালে বাঁচে বেশ কয়েক বছর। পাতা তিনটি গভীর খাঁজে বিভক্ত, পাতার অগ্রভাগ সুচালো। ফুল বড়, চক্রাকার, একটি একটি করে আলাদাভাবে ফোটে। ফুলের রশ্মিগুলোর অগ্রভাগ নীল, গোড়ার দিক বেগুনি ও মাঝে সাদা। এই রংবিন্যাস ফুলটির সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফুল ফোটে বর্ষাকালে। এবার জাতীয় বৃক্ষমেলাতেও টবে নীল ঝুমকা ফুটতে দেখা গেছে।

এ ফুলের জন্মভূমি ব্রাজিল। লাল ঝুমকাও আছে। সেটি ভিন্ন প্রজাতির।