কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার ৫

ফেনীর সোনাগাজীতে ১৬ বছরের এক কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এক ইউপি সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত সোমবার দুপুরে এই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কিশোরী বাদী হয়ে ইউপি সদস্যসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ্য করে অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় ধর্ষণের মামলা করে। মামলা করার এক ঘণ্টার মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইউপি সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন বগাদানা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মাঈন উদ্দিন (৩৫), জয়নাল আবেদিন (২০), নজরুল ইসলাম (২১), আনোয়ার হোসেন (২২) ও অটোরিকশাচালক আলমগীর হোসেন (২৩)।

পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার সকালে উপজেলার চরসাহাভিকারী এলাকার ওই কিশোরী বাড়ি থেকে বের হয়। সে ১০ টাকা দামের চাল কেনার জন্য কাজীরহাট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাকিয়াবাজার এলাকার বগাদানা ইউপি কার্যালয়ে যায়। চাল নিয়ে অটোরিকশায় করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। তাকিয়াবাজার-কাজীরহাট সড়কের আলমপুর এলাকায় চালক হঠাৎ অটোরিকশাটি থামিয়ে দেন। সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে থাকা তিন যুবক এগিয়ে এসে চালকের সহায়তায় কিশোরীকে জোর করে পাশের একটি বিদ্যালয়সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান। তিন যুবক পালাক্রমে কিশোরীকে গণধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে কিশোরী অচেতন হয়ে পড়ে। এই যুবকদের সঙ্গে পরে আরও দুই যুবক যোগ দেন। জ্ঞান ফিরলে কিশোরী চিৎকার করে। যুবকেরা কিশোরীকে অটোরিকশায় তুলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিছু দূর যাওয়ার পর চালকসহ পরে আসা দুই যুবক অটোরিকশার ভেতরে কিশোরীকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেন।
কাজীরহাট বাজারের উত্তর পাশে এলে কিশোরী অটোরিকশা থেকে লাফিয়ে দৌড় দেয়। সে একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে যুবকেরা পালিয়ে যান। কিশোরী লুকিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানায়। পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাঈন উদ্দিনকে বিষয়টি জানায়। তারা থানায় মামলা করার জন্য মাঈন উদ্দিনের কাছে পরামর্শ চায়।

কিশোরীর বাবার ভাষ্য, ইউপি সদস্য মাঈন উদ্দিন তাঁদের (ভুক্তভোগী) বাড়িতে এসে বিষয়টি তিনি নিজে সমাধান করবেন বলে থানায় যেতে নিষেধ করেন। তাঁরা থানায় যেতে চাইলে মাঈন উদ্দিন বাধা দেন। মামলা করলে আরও বড় ধরনের ক্ষতির হুমকি দিয়ে তাঁদের বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

কিশোরীর বাবার বলেন, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ইউপি সদস্য মাঈন উদ্দিন ওই যুবকদের তাঁদের বাড়িতে ডেকে এনে সালিসে বসেন। কারও কোনো কথা না শুনে মাঈন উদ্দিন ধর্ষকদের নাকে খত ও চড়-থাপ্পড় দিয়ে ভবিষ্যতে এমন কাজ আর না করার কথা বলে সালিস বৈঠক শেষ করেন। ইউপি সদস্যের এমন বিচার তাঁরা মেনে নেননি।

কিশোরী জানায়, ইউপি সদস্যের হুমকির ভয়ে তারা সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। মঙ্গলবার রাতে পরিবারের সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে লুকিয়ে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করে। কিশোরী ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় ইউপি সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার ফেনী সদর হাসপাতালে ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষা শেষে জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে নেওয়া হবে।