চা-বাগান দখলের মামলায় ছেলেসহ রাগীব আলী কারাগারে

রাগীব আলী
রাগীব আলী

ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির করে তারাপুর চা-বাগান দখলের মামলায় সিলেটের বিতর্কিত ব্যবসায়ী রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আবদুল হাইকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ছেলেসহ রাগীব আলী আত্মসমর্পণ করলে বিচারক মোহাম্মদ মোস্তাইন বিল্লাহ দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি শামীম আহমদ জানান, আদালতের নির্দেশের পরই দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি জানান, তারাপুর চা-বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে সরকারের হাজার কোটি টাকার ভূমি আত্মসাৎ এবং জালিয়াতির একটি মামলায় রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের পক্ষে আইনজীবীরা জামিন আবেদন জানান। শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।

২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিলেটের তৎকালীন মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো পাঁচটি ধারায় রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আবদুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। ওই বছরের ৬ এপ্রিল তারাপুর চা-বাগান দখল করে সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অপর আরেক মামলার রায়ে রাগীব আলী ও ছেলেমেয়েসহ পাঁচজনের সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আবদুল হাই প্রায় ১১ মাস কারাভোগের পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান জালিয়াতি ও প্রতারণা করে বাগান দখল নেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তৎকালীন ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) এস এম আবদুল কাদের। 


মামলায় ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা সিলেটের দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা-বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয়ে রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে। তবে রাগীব আলীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু সরকারপক্ষ আপিল করলে প্রায় এক যুগ পর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তারাপুর চা-বাগান প্রকৃত মালিকের জিম্মায় দেওয়া ও দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই আদেশের পর ২০১৬ সালের ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। ২০১৬ সালের ১০ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে দুটো মামলায় রাগীব আলী ও তাঁর ছেলেকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ১০ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে রাগীব আলী ছেলেকে নিয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান।

পালিয়ে ভারতে অবস্থানকালে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ১২ নভেম্বর জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন হয়ে বাংলাদেশে এলে আবদুল হাই গ্রেপ্তার হন। ২৪ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রাগীব আলী। ওই দিনই বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে তাঁকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতে দুজনের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা হয়েছিল।

এ মামলা ছাড়াও তারাপুর চা-বাগান দখল করে সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পৃথক আরেকটি মামলায় সিলেটের মহানগর বিচারিক হাকিম আদালত রাগীব আলী, ছেলে, মেয়ে, জামাতা ও একজন নিকটাত্মীয়কে সাত বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ মামলায়ও আপিল করেছেন রাগীব আলী। এ ছাড়া ২ লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা সিলেট মহানগর হাকিম আদালতে (১) বিচারাধীন আছে। গত ১৭ মে এ মামলার অভিযোগ গঠন হয়।

দণ্ড ও মামলা ছাড়াও টিলা কাটার দায়েও অর্থদণ্ড রয়েছে রাগীব আলীর। তাঁর পরিচালনাধীন মালিনীছড়া চা-বাগানে টিলা কাটার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় গত ৮ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড মনিটরিং উইং শাখা ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে রাগীব আলীকে।