আ.লীগের শক্ত ঘাঁটি কোন্দলে নড়বড়ে

ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু

এ অবস্থায় কোন্দল মেটাতে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৪ সেপ্টেম্বর বরগুনা সফর করবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ধীরেন্দ্র দেবনাথের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে দলীয় ফোরামে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়। গত জানুয়ারিতে বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমকে জানানো হয়। এরপর গত এপ্রিলে বিষয়টি দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনা হয়। সর্বশেষ ৪ সেপ্টেম্বর জেলা সদরে সংবাদ সম্মেলন করে শম্ভুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে দলের একটি পক্ষ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদের কারণেই দলে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না মেনে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে বহাল রেখেছেন তিনি। সব জায়গায় অনিয়ম করে তিনি দলে কোন্দল বাড়িয়েছেন। এ নিয়ে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বরগুনা সদর পৌরসভার মেয়র শাহাদাত হোসেন দাবি করেন, অধিকাংশ নেতা সাংসদের পক্ষে আছেন। সাবেক সাংসদ দেলোয়ারের মাধ্যমে দলে বিদ্রোহ শুরু হয় বলে দাবি করেন তিনি।

দলীয় সূত্র জানায়, ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে ধীরেন্দ্র দেবনাথ (সভাপতি) ও জাহাঙ্গীর কবির (জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক) নেতৃত্ব দিচ্ছেন বরগুনা আওয়ামী লীগকে। ২০১৬ সালের শেষ দিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই দুই নেতার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর কবির। মনোনয়ন না পাওয়ায় অসন্তুষ্ট হন তিনি।

১৯৯১ থেকে অনুষ্ঠিত সব কটি নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়েছেন শম্ভু। ২০০১ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে দলের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। বিদ্রোহী প্রার্থী হন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন। নির্বাচনে হেরে যান শম্ভু। দল থেকে বহিষ্কৃত হন দেলোয়ার। এরপর ২০০৬ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে আবার মনোনয়ন পান দেলোয়ার। যদিও সে নির্বাচন হয়নি। তখন বিদ্রোহী প্রার্থী হন শম্ভু। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পান শম্ভু। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে হেরে যান দেলোয়ার এবং দল থেকে বহিষ্কৃত হন। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তিনি। দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকলেও ২০১৬ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সাংসদ পদের লড়াই থেকে দেলোয়ারকে সরাতেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ তাঁকে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতারা।

বরগুনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্বেচ্ছাচারিতার চরমে পৌঁছেছেন সাংসদ। টাকা ছাড়া তাঁর কাছে কোনো কথা নেই। দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করায় কোন্দল এখন ভয়াবহ হয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বরগুনা পৌর মেয়র নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান মহারাজ। বিদ্রোহী প্রার্থী হন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন। শম্ভুর সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন শাহাদাত। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। অন্যদিকে ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত আমতলী পৌর নির্বাচনে দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী শামসুল হক। কিন্তু শম্ভুর সমর্থন নিয়ে জয়ী হন আরেক প্রার্থী সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়ার রহমান।

বরগুনা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান বলেন, সাংসদ শম্ভু নিজেই জেলা কমিটির সভাপতি। তাঁর সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু হয় না।