বজ্রপাতে সাত জেলায় নয়জনের মৃত্যু

সাত জেলায় বজ্রপাতে আজ বুধবার নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় দুজন করে চারজন মারা গেছেন। অন্য পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে গাইবান্ধা, নেত্রকোনা ও বাগেরহাটে, ফরিদপুর ও সুনামগঞ্জে।

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো পাঠানো খবর:

সুনামগঞ্জ: বেলা ১১টার দিকে ছাতক উপজেলার সুরমা নদীতে পৃথক বজ্রপাতে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন উপজেলার জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা লুলু দাসের ছেলে হৃদয় দাস (২০) ও পিরোজপুরের চাপালবাড়ি গ্রামের আইনুল হকের ছেলে বালু শ্রমিক মামুন মিয়া (২৮)।
ছাতক থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় হৃদয় ছাতক পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীতে মাছ ধরছিলেন অন্য দিকে মামুন একটি কার্গোতে বালু তুলছিলেন। ভারী বৃষ্টির মধ্যে পৃথক ওই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

সাতক্ষীরা: কালিগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে দুই সহপাঠীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে দুজন। বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে চম্পাফুল বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মৃত দুজন হলো: বিলকিস খাতুন (১৪) ও মুসলিমা খাতুন ময়না (১৪)।
বিলকিস কালিগঞ্জের সাইহাটি গ্রামের বিল্লাল খার মেয়ে ও চম্পাফুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মুসলিমা একই গ্রামের আকবর আলীর মেয়ে। সে একই বিদ্যালয়ের একই শ্রেণিতে পড়ত। আহতরা হলো, বালাপোতা গ্রামের রহিম শেখের মেয়ে রুবিনা (১৩) ও তেঁতুলিয়া গ্রামের হায়দার আলীর মেয়ে সাথি (১৪)। এরাও চম্পাফুল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, বুধবার বিকেলে চম্পাফুল বাজার এলাকায় বজ্রপাতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গাইবান্ধা: দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার জামালপুর গ্রামে বজ্রপাতে স্কুলছাত্র ফয়সাল মিয়ার (১৪) মৃত্যু হয়। ফয়সাল পলাশবাড়ী স্টুডেন্ট কেয়ার সেন্টারের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ও ওই গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।

পুলিশ বলছে, ঘটনার সময় ফয়সাল জমিতে ছিল। বজ্রপাতের ঘণ্টাখানেক পরে প্রতিবেশীরা জমিতে ফয়সালকে পড়ে থাকতে দেখেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফয়সালের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুর আলম।

নেত্রকোনা: দুপুরে কলমাকান্দা উপজেলার মুন্সীপুর গ্রামে মারা যায় শিশু আজিজুল হক (১০)। আজিজুল ওই গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে আজিজুল ফুটবল খেলছিল। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে শিশুটির শরীর ঝলসে যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, আজিজুলের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।

বাগেরহাট: দুপুরে শরণখোলা উপজেলায় ধানসাগর ইউনিয়নের হোগলপাতি গ্রামে নিহত হন কৃষক বিপুল হালদার (৪৫)। ঘটনার সময় তিনি গোয়ালঘরের পাশে গরুর খাবার দিচ্ছিলেন বলে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য তপু বিশ্বাস। শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, বিপুলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

ফরিদপুর: চরভদ্রাসন উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পশ্চিম চর শালিপুর গ্রামে বজ্রপাতে সোহাগ মোল্লার (১২) মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সোহাগ সবার বড়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির হোসেন খান বলেন, মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে সোহাগের মৃত্যু হয়।

ধরমপাশা (সুনামগঞ্জ): ধরমপাশা উপজেলার মরিচাউড়ি হাওরে চাঁই পেতে (বাইড়) মাছ শিকার করার সময় বুধবার বিকেলে বজ্রপাতে মো. তোফায়েলের (২৩) মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের খালিসাকান্দা গ্রামে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের খালিসাকান্দা গ্রামের জেলে তোফায়েল নৌকা নিয়ে মরিচাউড়ি হাওরে চাঁই (বাইর) পেতে মাছ শিকার করতে যান। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। একপর্যায়ে বিকেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁর লাশ উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়।
মধ্যনগর থানার এসআই দীপংকর সরকার বজ্রপাতে এই জেলের মৃত্যুর খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।