হত্যা মামলার শুনানি ২০ সেপ্টেম্বর, নাশকতার বৃহস্পতিবার

খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুনে পুড়িয়ে আটজনকে হত্যার ঘটনা ও একই উপজেলায় কাভার্ড ভ্যান পোড়ানোর মামলার জামিনের পৃথক শুনানি আজ বুধবার কুমিল্লার আদালতে হয়েছে। হত্যা মামলার শুনানি হয় কুমিল্লার ৫ নম্বর (চৌদ্দগ্রাম) আমলি আদালতে। এতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিপ্লব দেবনাথ জামিনের শুনানির নতুন দিন ২০ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন।

বিকেলে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কাভার্ড ভ্যান পোড়ানোর মামলার অধিকতর শুনানি শুরু হয়। জেলা ও দায়রা জজ কে এম সামছুল আলম রাষ্ট্রপক্ষ ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় আবারও শুনানির সময় নির্ধারণ করেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী মো. কাইমুল হক বলেন, চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সময় চাওয়ায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। নাশকতার মামলার শুনানি বৃহস্পতিবার সকালে হবে। এই দুই মামলায় জামিন পেলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রামের হায়দারপুল এলাকায় পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেয় হরতালের সমর্থকেরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই দিন দুপুরে ওমর ফারুক মিয়াজী নামে শিবিরের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার ৩২ নম্বর আসামি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে মামলা করেন।

২৩ এপ্রিল কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এ খালেদার জামিন চেয়ে আইনজীবীরা আবেদন করেন। ৭ জুন আবেদনের শুনানি দিন ধার্য হয়। ট্রাইব্যুনালে শুনানি না করে তাঁর আইনজীবীরা হাইকোর্টে জামিন চান। ২৮ মে ছয় মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ জামিন স্থগিতের আবেদন করেন। আবেদন নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ ২৬ জুন খালেদার জামিন বহাল রাখার আদেশ দেন। একই সঙ্গে জামিন চাওয়ার বিষয়টি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে কি না, জানতে চান হাইকোর্ট। হাইকোর্ট ১৩ আগস্ট বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। ২০ আগস্ট কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ কে এম সামছুল আলমের আদালতে এ নিয়ে শুনানি হয়। ওই দিন খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন, কাইমুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সরকারি কৌঁসুলি মোস্তাফিজুর রহমান। তখন আদালতের বিচারক ৩০ আগস্ট দিন ধার্য করেছিলেন। ওই দিন দুপুরে খালেদার পক্ষে আইনজীবী সালাউল্লাহ মিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুনানিতে অংশ নেন। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ অধিকতর শুনানির জন্য আবেদন করেন। তখন শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ কে এম সামছুল আলম অধিকতর শুনানির জন্য ১২ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ ধার্য করেন।

২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে আটজন যাত্রী নিহত ও ২৭ জন আহত হন। ঘটনায় পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সাবেক সাংসদ সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরসহ বিএনপি ও জামায়াতের ৫৬ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মো. আলমগীর, ২৫ ফেব্রুয়ারি জাকির হোসেন ও ২৬ ফেব্রুয়ারি মো. মোতালেব নামের তিন ব্যক্তি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। এতে তাঁরা খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করেননি। পরে ২০১৫ সালের ২ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর আরেকটি সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হয়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার মারা যাওয়ায় তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। উভয় অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়ার নাম ৫১ নম্বরে আছে। পরবর্তী সময় ২০১৮ সালের ২৮ মে হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ মে চেম্বার বিচারপতি জামিনের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে হাইকোর্টকে পূর্ণাঙ্গ শুনানি করার নির্দেশ দেন। ১১ জুন বিচারপতি মো. শওকত হোসেন ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিষয়টি নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তির জন্য আদেশ দেন। বুধবার কুমিল্লার ৫ নম্বর আমলি আদালতে এই মামলার জামিনের শুনানি হয়। পরে আদালতের বিচারক নতুন তারিখ ধার্য করেন।