সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছরের দণ্ড, তবে প্রাণহানির বিষয়টি হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড

বেপরোয়া মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে সড়ক পরিবহন বিল ২০১৮ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বৃহস্পতিবার বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের ১১৪ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী তদন্তে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বিষয়টি হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে অপরাধী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তবে প্রস্তাবিত এই আইনে অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সুযোগ থাকলে আইনে তা স্পষ্ট করা হয়নি। বিল উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিলটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দ্রুত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।

প্রস্তাবিত আইনের ১০৫ ধারায় বলা আছে, এই আইনে যা-ই থাকুক না কেন, মোটরযান চালাতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে এ সংক্রান্ত অপরাধ দণ্ডবিধির-১৮৬০ এর এ সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে দণ্ডবিধির ৩০৪বি ধারাতে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলা করে মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে ওই চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এই বিলের ১০৬ ধারায় বলা আছে, কোনো কোম্পানি এই ধরনের অপরাধ করলে ওই কোম্পানির মালিক, পরিচালক, নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক, সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে।

এই বিলে আরও বলা আছে, এই আইনের অধীন অপরাধ মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর তফশিলভুক্ত নির্বাহী হাকিমের মাধ্যমে বিচার করা যাবে। বিলের ৪ ধারাতে বলা আছে, কোনো ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করে পাবলিক প্লেসে গাড়ি চালাতে পারবে না বা চালানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না। ৫ ধারায় বলা আছে, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র ছাড়া কেউ গণপরিবহন চালাতে পারবে না বা চালানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না।

বিলের ৬৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আইনের ৪ ও ৫ ধারা লঙ্ঘন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের সাজা সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। ৬ ধারায় বলা আছে, অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ এবং পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ২১ হতে হবে। আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। আরও বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স হস্তান্তর করা যাবে না। এই ধারা কেউ লঙ্ঘন করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বিলে বলা হয়েছে, ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ সনদ ব্যবহার অথবা ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত হওয়া মোটরযান চালালে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। ১৩ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বা লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল হয়ে গেলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই ব্যক্তিকে চালক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে না বা চালানোর অনুমতি দিতে পারবে না। শ্রম আইন অনুযায়ী লিখিত চুক্তি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তিকে গণপরিবহনের চালক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে না।

বিলে আরও বলা হয়েছে, সরকার বা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা এবং প্রয়োজনে নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থানীয়ভাবে প্রচারের মাধ্যমে সারা দেশের বা নির্দিষ্ট কোনো এলাকা, সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার বা টানেলে যে কোনো মেয়াদের জন্য সকল বা যে কোনো মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সরকার বা সরকারের অনুমতি নিয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে সারা দেশে বা যে কোনো এলাকার জন্য যে কোনো মোটরযানের সংখ্যা নির্ধারিত করতে পারবে। কোনো এলাকায় মোটরযানের সংখ্যা নির্ধারিত সংখ্যা বেশি হলে অতিরিক্ত মোটরযানকে চাহিদা অনুযায়ী অন্য এলাকায় চলাচলের অনুমতি দেওয়া যাবে। মোটরযানের দুর্ঘটনার কারণে কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা মৃত্যুবরণ করলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল নামের একটি তহবিল থাকবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তাদের উত্তরাধিকারীদের এই তহবিল হতে ক্ষতিপূরণ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হারে ও পদ্ধতিতে মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আর্থিক সহায়তা তহবিলের জন্য বাৎসরিক বা এককালীন চাঁদা আদায় করবে। মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান এই তহবিলের জন্য চাঁদা দিতে বাধ্য থাকবে। তহবিলের টাকা তফশিলি ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। আর্থিক সহায়তা তহবিল পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টিবোর্ড থাকবে। বোর্ড আঘাতপ্রাপ্ত, ক্ষতিগ্রস্ত বা মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীকে দেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তার পরিমাণ নির্ধারণ ও মঞ্জুর করবে।