রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা

>
মিরোস্লাভ জেঙ্কা ও মির্জা ফখরুল ইসলাম
মিরোস্লাভ জেঙ্কা ও মির্জা ফখরুল ইসলাম

• জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণে বিএনপির নেতারা নিউইয়র্কে যান
• জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা
• জাতিসংঘের সরাসরি পর্যবেক্ষণে নির্বাচন অনুষ্ঠান চায় বিএনপি
• খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেঙ্কার সঙ্গে বৈঠক করে।

বৈঠকে বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয় বলে বিএনপির সূত্রে জানা গেছে।

নিউইয়র্ক সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টা (বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে আটটা) থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা বৈঠক হয়। এর মধ্যে ১০ মিনিট মিরোস্লাভ জেঙ্কার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের একান্তে কথা হয়। ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও লন্ডন থেকে যাওয়া দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর।

বৈঠক শেষে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক দিনের আলোচনায় কি কিছু হয়? তবে বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, সরকার আরও একটি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে চায়। সেজন্য তাঁরা চান জাতিসংঘের সরাসরি পর্যবেক্ষণে নির্বাচন অনুষ্ঠান হোক। খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়। তবে বিএনপি বা জাতিসংঘের পক্ষ থেকে নাম করে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বিএনপির সূত্র জানায়, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে বিএনপির এই প্রতিনিধিদল গতকাল এই বৈঠকে যোগ দেয়।

বৈঠকে ছিলেন এমন একজন নেতা পরে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও পরিবেশ কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, সেটাও তুলে ধরেছেন। বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের বেপরোয়া মনোভাব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ মানুষ গুম, গ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা, মতপ্রকাশে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন তৎপরতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির ওই নেতা জানান, রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির প্রতিনিধিদল বলেছে, বিএনপি সরকার রোহিঙ্গা সংকট দুই দফা মোকাবিলা করেছে। একবার ১৯৭৮ সালে, আরেকবার ১৯৯২ সালে। তখন বিএনপি সরকার দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। কিন্তু এবার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেনি। তারা বহুপক্ষীয় বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে সংকট নিরসন উদ্যোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
নিউইয়র্ক বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনে যাবেন। সেখান থেকে দেশে ফিরবেন। ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের কোনো বৈঠক আছে কি না, সে বিষয়ে দলের নেতারা কিছু বলেননি।

প্রসঙ্গত, এর আগেও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতপার্থক্য দূর করতে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুনের দূত হিসেবে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় ঢাকায় আসেন। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ৬ দিনের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।

মূলত বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে সব পক্ষকে সংলাপে উৎসাহ জোগানো ছিল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর শেষ সফরের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রসচিব, নাগরিক সমাজ, ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের সঙ্গে ২৫টি বৈঠকে অংশ নেন তারানকো। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা কাটেনি। প্রধান দুই দল নিজ নিজ অবস্থানে অনড় ছিলেন। তারানকো যাওয়ার আগে বলে যান, দুই দলকে সংলাপে বসাতে পেরেছেন, এটাই তাঁর সাফল্য। এরপর ২০১৪ সালের জতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল বর্জন করে।