সম্পর্কের কথা পরিবার জানায় আত্মহত্যা স্কুলছাত্রীর

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধারের মামলা সাড়ে চার মাস তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে এটি আত্মহত্যা। নবম শ্রেণি পড়ুয়া তাসফিয়া আমিনের সঙ্গে এক সহপাঠীর সম্পর্ক ছিল। সেটি ছাত্রীর পরিবার জানতে পারে। ঘটনার দিন সহপাঠীর সঙ্গে রেস্তোরাঁয় দেখা করার বিষয়টি পরিবার জেনে যায়। এ জন্য নগরের গোলপাহাড় থেকে পতেঙ্গায় সমুদ্রসৈকতে গিয়ে আত্মহত্যা করে।

আজ রোববার বিকেলে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের আদালতে দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ছাত্রীটির পরিবারের দাবি, এটি আত্মহত্যা নয়। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের প্রতিবেদনটি দেখে পরে তাঁরা আদালতে নারাজি আবেদন করবেন।

নগরের সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল মেয়েটি। গত ২ মে সকালে নগরের পতেঙ্গা থানার নেভাল একাডেমি-সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। আগের দিন সন্ধ্যা থেকে ওই ছাত্রী নিখোঁজ ছিল। ওই দিন সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে নগরের গোলপাহাড় এলাকার একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় এক কিশোরের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে সে। এরপর থেকে ছাত্রীটিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন পুলিশ লাশটি উদ্ধারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় মো. ফিরোজ, এক কিশোরসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়। গ্রেপ্তার কিশোর এলিমেন্টারি স্কুলের শিক্ষার্থী। সে এখন কারাগারে রয়েছে। গত ২০ আগস্ট জামিনে বেরিয়ে গেছেন গ্রেপ্তার আসামি মো. ফিরোজ ও আসিফ মিজান।

প্রথমে পতেঙ্গা থানার পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। কিন্তু কোনো কিছু বের করতে না পারায় পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এদিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবের ভিসেরা পরীক্ষায় উঠে এসেছে বিষক্রিয়ায় কিশোরীর মৃত্যু হয়নি। অন্যদিকে ‘ভ্যাজাইনাল সোয়াব’ পরীক্ষায় রয়েছে, মৃত্যুর আগে ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির শিকার হয়নি স্কুলছাত্রীটি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও কিছুই মেলেনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) স্বপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রীটির সঙ্গে সহপাঠীর সম্পর্ক ছিল। পরিবার তা জেনে যায়। লুকিয়ে ছাত্রীটি ঘটনার দিন নগরের একটি রেস্তোরাঁয় সহপাঠীর সঙ্গে দেখা করে। বিষয়টি পরিবার জেনে যাওয়ায় লজ্জায় পতেঙ্গায় গিয়ে আত্মহত্যা করে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও আত্মহত্যা পাওয়া গেছে। ছাত্রীটি নিজ থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে লাফ দেয় বলে একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য পাওয়া গেছে। তাই মামলার ছয় আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

মামলার বাদী নিহত ছাত্রীর বাবা মো. আমিনের মোবাইল বন্ধ রয়েছে। তাঁদের আইনজীবী খালেদ রশিদ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, এটি আত্মহত্যা নয়। পরিকল্পিত হত্যা। পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনটি দেখার পর তাঁরা আদালতে নারাজি আবেদন করবেন। গোলপাহাড় থেকে পতেঙ্গায় কীভাবে গেল, তা তদন্তে বেরিয়ে আসেনি।