বিনা তেলে মুখরোচক নানা পদ

বিনা তেলে রান্না করা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করছেন অতিথিরা। গতকাল অফিসার্স ক্লাবে। প্রথম আলো
বিনা তেলে রান্না করা খাবারের স্বাদ গ্রহণ করছেন অতিথিরা। গতকাল অফিসার্স ক্লাবে। প্রথম আলো

ষাটোর্ধ্ব নূরজাহান আজীজ নিজেই রান্না করেন। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে রান্নায় তেল ব্যবহার যতটা পারেন কম করেন। তেলের ব্যবহার বেশি হয় এমন খাবার—পোলাও, রোস্ট, রেজালা পাতে তোলেন না। রেস্তোরাঁয় খেতে যান না। তবে তেল ছাড়া রান্না করা গেলে এসব মুখরোচক খাবার মাঝেমধ্যে চেখে দেখতে বেশ আগ্রহী তিনি।

অফিসার্স ক্লাবে তেল ছাড়া রান্না করা মুরগির রোস্ট খেতে খেতে নিজের ইচ্ছার কথা জানান আদাবরের বাসিন্দা নূরজাহান। শনিবার সাওল হার্ট সেন্টার (বিডি) লিমিটেডের বিনা তেলে রান্না করা খাবারের ক্যাটারিং এবং হোম ডেলিভারি সার্ভিস ‘অয়েল ফ্রি কিচেন’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল। এর অংশ হিসেবে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন। যেখানে মুখরোচক খাবারগুলো ছিল তেলবিহীন।

নূরজাহান অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘বয়স বেড়েছে। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছি। তাই কত কী খেতে পারি না। অথচ ইচ্ছে করে।’ তিনি এখন থেকে বাসায় তেল ছাড়া খাবার রান্নার চেষ্টা করবেন বলে জানান।

গৃহিণী খালেদা আক্তারের স্বামীর হার্টের অসুখ। ২০১৫ সাল থেকে তিনি কম তেলে রান্না করেন। তিনি এসেছেন তেল ছাড়া রান্নার কৌশল জানতে। বাসায় সেভাবে রান্না করবেন।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন অয়েল ফ্রি কিচেনের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। খাবার নিয়ে সমাজকে সচেতন করা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে আমূল পরিবর্তন সম্ভব।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বিনা তেলে রান্নার বিষয়টি জনপ্রিয় করা উচিত। এ ধরনের রান্না শেখানোরও আয়োজন করা যেতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এম আখতারুজ্জামান বলেন, খাবারে তেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে অনেক রোগের প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, পুষ্টিহীনতা ও অতি পুষ্টি গ্রহণ—দুটিই সমস্যা। তেল অনেকের জন্য শারীরিক ক্ষতির কারণ হলেও কিশোর বা যারা অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রমের সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য দরকার। এসব বিষয় বিবেচনা করে খাবারের তালিকা বানানো দরকার।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই তেল হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতি ওজন, বদহজম, গ্যাস্ট্রিক, ক্যানসারসহ নানা রোগের সৃষ্টি করে। বক্তারা আরও বলেন, বাঙালির রসনাবিলাসে তেল-মসলার ছড়াছড়ি। তেল ছাড়া রান্না করা সম্ভব—প্রচলিতভাবে এ ধারণা নেই। অথবা করা গেলে মুখরোচক হবে না বলে মনে করা হয়। কিন্তু তেল ব্যবহার না করেও সুস্বাদু খাবার রান্না করা যায়। যাতে খাবারের স্বাদ থাকবে অটুট, আবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও হবে না।

সাওল হার্ট সেন্টারের (বিডি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তেল ছাড়া রান্নার পদ্ধতি স্বাভাবিক রান্নার মতোই। কেবল তেল ছাড়া অথবা তেলের বদলে পানি ব্যবহার করে রান্না করতে হবে। তেল ছাড়া রান্নার কয়েকটি কৌশলও জানান তিনি। যেমন মাছ-মাংস রান্নার ক্ষেত্রে সব মসলা মিশিয়ে কিছুক্ষণ ম্যারিনেট করে রাখা ভালো। এতে স্বাদ বাড়বে। সহজে সেদ্ধ হবে। পোলাও রান্নার ক্ষেত্রে চালের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে পানি-মসলা দিয়ে রান্না করা যাবে। আর রান্নার জন্য পাত্র হিসেবে প্রেশার কুকার, নন-স্টিক প্যান ব্যবহার করলে রান্না সহজ হবে, সময়ও বাঁচবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সকাল, দুপুর, রাতের খাবারসহ সব ধরনের খাবার পাওয়া যাবে এখানে। ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে মাধ্যমে খাবারের অর্ডার করা যাবে। অর্ডারের দুই ঘণ্টার মধ্যেই খাবার পৌঁছানো হবে। অনুষ্ঠানের শেষাংশে ছিল সংগীত এবং কবিতাপাঠের ব্যবস্থা। সংগীতশিল্পী শামা রহমানের কণ্ঠে ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’ গানটি ভিন্ন আবহের সৃষ্টি করে।

সাওল হার্ট সেন্টারের (বিডি) চেয়ারম্যান মোহন রায়হানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ মেজর জেনারেল (অব.) বিজয় কুমার সরকার, লেখক-শিক্ষাবিদ সলিমুল্লাহ খান উপস্থিত ছিলেন।