সন্ধ্যার পর ভুতুড়ে পরিবেশ, আলো জ্বলছে না

মগবাজার–মৌচাক–মালিবাগ ফ্লাইওভারের সিগন্যাল বাতি জ্বলছে না।  প্রথম আলো
মগবাজার–মৌচাক–মালিবাগ ফ্লাইওভারের সিগন্যাল বাতি জ্বলছে না। প্রথম আলো

মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে স্থাপিত বাতিগুলো জ্বলছে না। উড়ালসড়কের বৈদ্যুতিক তার (কেবল) ও বাক্স চুরি হয়ে যাওয়ায় সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অন্ধকার থাকছে ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালসড়ক। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।  

উড়ালসড়ক বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রমতে, এ পর্যন্ত চারবার বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়েছে। বৈদ্যুতিক বাক্সগুলোও চুরি হয়েছে দফায় দফায়। প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়কের তারগুলো একবার চুরি হলে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সে হিসাবে চারবারে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাক্স খোয়ানোর ক্ষতিও।

গত শনিবার সন্ধ্যার পর উড়ালসড়কের হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল-সাতরাস্তা, রাজারবাগ-মৌচাক, ওয়ারলেস-বাংলামোটর, হাতিরঝিল-সোনারগাঁও অংশ ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুতের খুঁটিগুলোয় বাতি জ্বলছে না। পুরো উড়ালসড়ক অন্ধকারাচ্ছন্ন। এ কারণে যানবাহন চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। উড়ালসড়ক ধরে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল প্রান্ত থেকে সোনারগাঁও প্রান্তে আসা চারটি গাড়ির চালকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, গাড়ির হেডলাইট ছাড়া কিছু দেখা যায় না। হলি ফ্যামিলি-সাতরাস্তা উড়ালসড়কের মাঝখানে বিভাজক থাকলেও আলো না থাকায় তা দেখা যায় না। এতে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িগুলো দেখে মনে হয়েছে যেন মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে। এতে চালকেরা স্নায়ুর চাপেও পড়েন বলে জানান। টঙ্গী ডাইভারশন রোড এলাকার মোটরসাইকেল বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মকর্তা আবদুর রশিদসহ কয়েকজন দোকানি মন্তব্য করেন, রাত বাড়লে যখন চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা কমে আসে, তখন উড়ালসড়ক এলাকায় ওপরে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে।

উড়ালসড়কের মৌচাক অংশে ট্রফিক সংকেত বাতি রয়েছে। কিন্তু সেগুলোও কাজ করছে না। কোনো বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি। এ জন্য যানবাহনগুলো অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এক যুবককে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হাতের ইশারায় ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, বিদ্যুতের তার চুরির কারণে বাতিগুলো জ্বলে না, দিনের বেলায় সমস্যা না হলেও সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় উড়ালসড়কের বৈদ্যুতিক তার বারবার চুরি হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন মগবাজার এলাকায় বসবাসকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুনেছি এই উড়ালসড়ক নির্মাণে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অথচ এর বৈদ্যুতিক তার চুরি ঠেকানোর জন্য সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করছে না।

এলজিইডির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, গত সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উড়ালসড়ক বিষয়ে তাঁদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই। তা ছাড়া প্রকল্পের সারপত্রেই বলা আছে যে হস্তান্তর হওয়ার পর সিটি করপোরেশন উড়ালসড়কের বাতি ও সিগন্যাল বাতির দেখভাল করবে। বর্তমানে উড়ালসড়কের বেশির ভাগ অংশে কোনো বাতি না জ্বলার কারণ যে তার চুরি হয়ে যাওয়া, এটা সবাই জানে। বর্তমানে নতুন কেব্‌ল দিতে প্রায় এক কোটি টাকা প্রয়োজন। ঠিকাদারি কোম্পানি তমা কনস্ট্রাকশনের এখন আর কোনো দায়দায়িত্ব নেই।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তরের পর সড়কবাতিসহ উড়ালসড়কের সার্বিক বিষয় দেখভালের দায়িত্ব থাকবে তাদের। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থাও থাকবে।