ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানের

চট্টগ্রাম নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সমন্বয় সভা শেষে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের হাত ধরে বেরিয়ে আসছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। ছবি: সৌরভ দাশ
চট্টগ্রাম নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সমন্বয় সভা শেষে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের হাত ধরে বেরিয়ে আসছেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। ছবি: সৌরভ দাশ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরের চারটি আসনের সব কটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন দুই আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁরা হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ও দলের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। তবে দুই নেতাকে সতর্ক করেছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন ও উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সমন্বয়হীনতার কারণে নগরে পরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে না বলে একাধিকবার অভিযোগও করেছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির।
আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে দুই প্রতিষ্ঠান প্রধানের মধ্যে সমন্বিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা এই সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
সভায় দুই নেতাকে সতর্ক করে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সিটি মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানকে সতর্ক করে দিতে চাই, চট্টগ্রামের উন্নয়ন ব্যাহত হলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। দুজনকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, জনগণের প্রতি আপনাদের দায়বদ্ধ থাকতে হবে।’
গত ২১ জুন নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় জলাবদ্ধতা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর তিন দিন পর সিটি করপোরেশনের সমন্বয় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত হননি সিডিএ চেয়ারম্যান।
আজকের সভায় মেয়র আ জ ম নাছির দাবি করেন, তাঁদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা ছিল না। কেউ কেউ ধারণা করেন, মেয়র এবং সিডিএ চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ড যদি প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, তাহলে সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম নগরের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা সব সময় তা করে। তবে প্রতিপক্ষ যাতে এই সুযোগ না পায়, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সতর্ক আছে।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উল্লেখ করে মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, ‘আমরা (মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান) সরকারেও আছি। সুতরাং সরকারের ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে, সে লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। চট্টগ্রাম নগরের প্রত্যেকটি আসন যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
আওয়ামী লীগের কর্মী হওয়ার কারণে সিডিএ চেয়ারম্যান হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন আবদুচ ছালাম। তিনি বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের কোনো সুযোগ নেই। আমি শুরু থেকেই দলকে প্রাধান্য দিয়ে আসছি।’ তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না। যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, তাঁদের এ সভা থেকে বার্তা দিতে চাই, উই আর ইউনাইটেড (আমরা ঐক্যবদ্ধ)।’
সভায় সিডিএ চেয়ারম্যান জানান, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে। এর মধ্যে সিডিএ করছে ২০ হাজার কোটি টাকার কাজ। সিডিএ, সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসাসহ সরকারি সংস্থাগুলো যেসব উন্নয়ন করছে, তা আওয়ামী লীগের ঝুড়িতে আনতে হবে।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেননি তিনি। তবে তা কীভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে সচেষ্ট আছেন বলে জানান সিডিএ চেয়ারম্যান।
নিজেদের প্রয়োজনেই দুই নেতার ঐক্য টিকে থাকবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, সামনের নির্বাচন বাঁচামরার লড়াই। আওয়ামী লীগ না এলে তো তাঁরা কেউই দায়িত্বে থাকবেন না।
সভা শেষে মেয়র আ জ ম নাছির সাংবাদিকদের বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে জনদুর্ভোগ হচ্ছে—এ বক্তব্য সঠিক নয়। তবে জনদুর্ভোগ হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। পুরোনো শহর হওয়ায় এই দুর্ভোগ হচ্ছে।
সমন্বিত সভায় বক্তব্য দেন সভায় নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম ও আলতাফ হোসেন প্রমুখ।
১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভায় খোরশেদ আলম সুজন মেয়রের সঙ্গে টেলিফোনে সিডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেন। এরপর সমন্বিত সভার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ সেপ্টেম্বর সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান ও ওয়াসা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা বৈঠকে বসবেন।