ভূগর্ভের পানি উত্তোলনে অনাপত্তিপত্র লাগবে

ভূ-উপরিস্থ পানির ওপরে কোনো স্থাপনা বা প্রকল্প করতে হলে সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত সংস্থার অনুমতি লাগবে। তবে প্রকল্পের পরিধি ছোট হলে স্থানীয় পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির অনাপত্তিপত্র নিলেই চলবে। একই সঙ্গে পানির প্রবাহ বা গুণাগুণ ক্ষতিগ্রস্ত করে, এমন কোনো স্থাপনা বা কর্মকাণ্ড হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এ ক্ষেত্রে স্থাপনা ভাঙা থেকে শুরু করে শাস্তিও দিতে পারবে তারা। আর স্থাপনা ভাঙার খরচও যারা সেটি নির্মাণ করেছে, তাদের দিতে হবে।
এমন সব বিধান রেখে বাংলাদেশ পানি আইনের বিধিমালা জারি করেছে সরকার। আজ সোমবার ওই বিধিমালার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে এক কর্মশালার আয়োজন করে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)। সংস্থাটিকে প্রাথমিকভাবে ওই বিধিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়ন করার মতো সংস্থাটির জনবল নেই উল্লেখ করে কর্মশালায় বলা হয়, এ জন্য সংস্থাটিতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
কর্মশালার প্রধান অতিথি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ওয়ারপোতে জনবল নিয়োগ করে তাদের দিয়ে ওই বিধিমালা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা ওয়াসাগুলোকে ওই দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর ওপরে ২২টি সেতু পাওয়া গেছে, যেগুলো নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে। ওই সব সেতু ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, এই বিধিমালায় পানিকে শুধু মানুষের ব্যবহার ও কৃষিতে সেচ দেওয়ার উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু পানির নিজের প্রতিবেশব্যবস্থা এবং এর মধ্যে থাকা জীববৈচিত্র্যের জন্য যে পানি দরকার, তা রক্ষার বিষয়টির কী হবে।
উত্তরে পানিসম্পদসচিব বলেন, ‘বিধিমালায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের বিষয়টি থাকা উচিত। সামনে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া যৌথ নদীগুলোর প্রাপ্তির বিষয়টিকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এত দিন শুধু গঙ্গা ও তিস্তার পানির বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন ছোট ও মাঝারি নদীর পানির বণ্টন নিয়েও আমরা চিন্তা করছি।’

পানি আইনের বিধিমালা
পানি আইনের বিধিমালায় ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি এলাকার ভূগর্ভে সর্বনিম্ন কতটুকু পানি থাকা দরকার, তা নির্ধারণ করা হবে। কৃষি, শিল্প বা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের জন্য ওই পানি উত্তোলনের একটি সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। কেউ ওই সীমার চেয়ে বেশি পানি উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে। দেশের কোনো এলাকায় পানির গুরুতর সংকট দেখা দিলে সরকার ওই এলাকাকে পানির সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে পারবে।
তবে ওই বিধিমালায় যেসব অভিযান ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, তা বাস্তবায়নের আগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শুনানিতে আসার সুযোগ দেওয়া হবে। এমনকি শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করারও তিনি অধিকার পাবেন।
কর্মশালায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টিকে অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। পানির ওপরে প্রকল্প ও অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে যে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার বিধান করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করার বিষয়টিকে অনলাইনভিত্তিক করা উচিত। নয়তো নানা ধরনের দুর্নীতির আশঙ্কা তৈরি হবে।