দুদকে সময় চাইলেন মোরশেদ খান-রুহুল আমিন হাওলাদার

মোরশেদ খান ও রুহুল আমিন হাওলাদারের ফাইল ছবি
মোরশেদ খান ও রুহুল আমিন হাওলাদারের ফাইল ছবি

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে সময় চেয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ও জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। আজ মঙ্গলবার তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও সকালে সময় চেয়ে আবেদন জমা দেওয়া হয়। আবেদনে অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করেছেন তাঁরা।

দুদক সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে গত বৃহস্পতিবার আলাদা চিঠিতে তলব করা হয়।
জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে তলব করা হয় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন উপপরিচালক সৈয়দ আহমেদ। সরকারি সম্পদ দখলে রাখার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর রুহুল আমিন হাওলাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। ২০১৪ সালের নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০১৭ সালে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু হয়। সেই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে জাপা মহাসচিবকে তলব করা হলো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুহুল আমিন হাওলাদার বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জানা মতে কোনো সরকারি সম্পত্তি আমার কাছে বা আমার ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার হয়নি। যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখনই কেউ এমন অভিযোগ করতে পারেনি। আর এখন ২৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে, তাহলে কী করে আমি সরকারি সম্পদ দখলে নিলাম? এটি আমাকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার একটা চক্রান্ত বলে মনে করি।’

এম মোরশেদ খান ও তাঁর স্ত্রী নাসরীন খানকে তলব করা হয় মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে। সিটিসেলের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৭ সালের ২৮ জুন ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। রাজধানীর বনানী মডেল থানায় মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক শেখ আবদুস সালাম। এখন ওই মামলার তদন্ত করছেন আরেক উপপরিচালক সামছুল আলম।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে আর্থিক লাভের জন্য প্রতারণা, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিবিটিএল) ব্যাংক গ্যারান্টির আবেদন যাচাই-বাছাই না করেই এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখার দেওয়া প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। পরে তিনজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সহায়তায় চারটি বোর্ড সভার মাধ্যমে ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার অপরিবর্তনীয় শর্তবিহীন ব্যাংক গ্যারান্টি অনুমোদন করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ওই ঋণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পিবিটিএল পরিশোধ করেনি। ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক গ্যারান্টির শর্তানুযায়ী এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখা সুদসহ ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ৩৬৩ টাকা ১৩ পয়সা পরিশোধের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করেন।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান, ভাইস চেয়ারম্যান আসগর করিম, পরিচালক নাসরিন খান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী, এবি ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইজার আহমেদ চৌধুরী, এম ফজলুর রহমান, শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সালমা আক্তার, মহাদেব সরকার সুমন, এসভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার সৈয়দ ফরহাদ আলম, আরশাদ মাহমুদ খান, মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহানুর পারভীন চৌধুরী, এভিপি জার ই এলাহী খান এবং রিলেশনশিপ অফিসার মো. কামারুজ্জামান।

এই মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হকসহ ১২ সাবেক ও বর্তমান পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। তাদের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে।