ক্ষতিপূরণের হার পর্যাপ্ত নয়

শ্রম আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনে শিল্প দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ এক লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। তবে ১০ বছর আগে এক লাখ টাকা নির্ধারণ হয়েছিল। তাই এটি কোনো বৃদ্ধি নয়। এটি বিশ-পঁচিশ লাখ টাকা হওয়া উচিত। তা ছাড়া জীবনের মূল্য টাকার বিনিময়ে করা উচিত না। ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত একজন শ্রমিকের হারানো আয় এবং যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের খরচ বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।

বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সহযোগিতায় প্রথম আলোর আয়োজনে ‘শ্রম আইনে প্রস্তাবিত সংশোধনের আলোকে মতামত ও সুপারিশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকার প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল সোমবার এ গোলটেবিল বৈঠক হয়।

অবশ্য বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০-২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেন প্রধান অতিথি শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষতিপূরণের একটি সর্বজনীন হার নির্ধারণ করেছি। তবে পোশাকশ্রমিক নিহত হলে দুই লাখের বাইরে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে আরও তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের দেওয়া হবে বাড়তি দুই লাখ টাকা।’

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। পাশে ব্লাস্টের প্রধান আইন উপদেষ্টা মোহাম্মদ নিজামুল হক।  ছবি: প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। পাশে ব্লাস্টের প্রধান আইন উপদেষ্টা মোহাম্মদ নিজামুল হক। ছবি: প্রথম আলো

শ্রম আইনের খসড়া সংশোধনী চলতি মাসের শুরুর দিকে মন্ত্রিসভায় পাস হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ‘সব মিলিয়ে ৪৯টি সংশোধনী আনা হয়েছে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধনীর বিষয়ে আমরা কাউকে চাপ দেব না।’

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্লাস্টের উপপরিচালক (আইন) মো. বরকত আলী। বক্তব্য দেন সাংসদ, অর্থনীতিবিদ, শ্রমিকনেতা ও মানবাধিকারকর্মীরা। তাঁরা শ্রম আইনের সংশোধনে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন অবাধ করা বা কোনো রকমের শর্তারোপ না করার বিষয়ে জোর দেন।

সাংসদ ইসরাফিল আলম বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেটি চার মাস। এই বৈষম্য দূর করা উচিত।’

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও ব্লাস্টের প্রধান আইন উপদেষ্টা মোহাম্মদ নিজামুল হক বলেন, ‘একজন শ্রমিকের মৃত্যুর পর মাত্র দুই লাখ টাকা। এটি আমাদের কাছে কম মনে হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনের অধীনে আনা দরকার। এটি হলে মামলায় সময় কম লাগবে। মানুষের উপকার হবে।