শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের দ্বার খুলল

শান্তিনিকেতনে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের দ্বার সর্বসাধারণের জন্য আজ খুলে দেওয়া হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
শান্তিনিকেতনে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের দ্বার সর্বসাধারণের জন্য আজ খুলে দেওয়া হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের দ্বার সর্বসাধারণের জন্য আজ মঙ্গলবার সকালে খুলে দেওয়া হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ ভবনের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং বিশ্বভারতীর কর্মসচিব সৈকত মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এই ভবনের দ্বার খুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের শিক্ষার্থীসহ বিশ্বভারতীর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ছিলেন বিশ্বভারতী পরিদর্শনে আসা পর্যটকেরাও। 

এখন থেকে এই ভবন প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে গ্রন্থাগার খোলা থাকবে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ভবনের মুখ্য সমন্বয়ক অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রথম আলোকে বলেছেন, দুর্গাপূজা পর্যন্ত বাংলাদেশ ভবন দর্শনের জন্য কোনো অর্থ লাগবে না । তবে পূজার পর অর্থসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেছেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ওই দুদিন বন্ধ থাকবে বাংলাদেশ ভবনও। তিনি আরও বলেছেন, আজ বাংলাদেশ ভবন খুলে দেওয়ার জন্য আসা শিক্ষার্থী ও অতিথিদের ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরে ভবনের ভেতর আর ছবি তুলতে দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২৫ মে উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশ ভবনের গ্রন্থাগার ও জাদুঘরের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় বিশ্বভারতী বলেছিল, ২২ শ্রাবণ কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসের দিন এই ভবনের দ্বার সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু এই ভবনের গ্রন্থাগার এবং জাদুঘরকে আরও আধুনিক এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে এবং সেখানে অতিরিক্ত স্মারক, রেপ্লিকাসহ বিভিন্ন তথ্য সংযুক্ত করার জন্য আরও কিছুটা সময় নেয় বিশ্বভারতী।
বাংলাদেশ ভবন গড়া হয়েছে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির ইন্দিরা গান্ধী সেন্টার আর শান্তিনিকেতন দূরদর্শন কেন্দ্রের কাছে। এই ভবন নির্মাণের জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিল ২ বিঘা জমি। আর এই জমিতেই বাংলাদেশ সরকার এই ভবন নির্মাণের জন্য দিয়েছিল ২৫ কোটি রুপি। এই বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া বাংলাদেশ ভবনের ডিজাইন অনুযায়ী। ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে।
এই ভবনে রয়েছে ৪৫০ আসনবিশিষ্ট একটি মিলনায়তন। অনুষ্ঠান করার সর্বাধুনিক একটি মঞ্চ। রয়েছে দুটি সেমিনার হল। একটি গ্রন্থাগার, একটি জাদুঘর, একটি গবেষণা ঘর, একটি ফ্যাকাল্টি কক্ষ এবং একটি বড় মাপের ক্যাফেটেরিয়া।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের একটা বড় সময় অতিবাহিত হয়েছে বাংলাদেশে। সেই ১৮৯০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত। কবিগুরুদের বাংলাদেশের শিলাইদহ, পতিসর আর শাহজাদপুরে ছিল বাড়ি। সেখানে কবিগুরু দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন। এখানে অবস্থানকালীন কবিগুরু তাঁদের জমিদারি দেখভালও করতেন। থাকতেন কবির সহধর্মিণীসহ তাঁদের সন্তানেরা। সে সময় কবিগুরু তাঁর সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য নিজগৃহেই চালু করেছিলেন পাঠশালা। কবিগুরু বাংলাদেশে অবস্থানকালে ঘুরতেন নৌকায়। ছিল তাঁর দুটি বোট পদ্মা ও চপলা। কবিগুরু এতে চড়ে বহু কবিতা ও গান লিখেছেন। আর সেসব স্মৃতির কথা এবার উঠে এসেছে বাংলাদেশ ভবনে। যদিও বিশ্বভারতীর অনুরোধে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র জাদুঘরের জন্য উপহার দিয়েছেন সেই পদ্মা ও চপলা বোটের রেপ্লিকা। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার জন্যও দিয়েছে এই বোটের রেপ্লিকা।
তাই কবিগুরুর স্মৃতিবাহী নানা সামগ্রী, স্মারক নিয়ে এবার বাংলাদেশ ভবনের জাদুঘর সাজিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সাজানো হয়েছে বাংলাদেশ ভবনের গ্রন্থাগারকেও। জাদুঘরে রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, নানা ছবিসহ কবিগুরুর জীবনের নানা কথা, বিশেষ করে বাংলাদেশে অবস্থানের নানা স্মৃতিবাহী ছবি, পাণ্ডুলিপি, স্মারকসহ আরও নানা দ্রব্য।
গত ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়।