ঘড়ির মেকানিক থেকে শিল্পপতি!

পাবনার ইড্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ও শিমলা হাসপাতালের মালিক শিল্পপতি মো. আবুল হোসেনের (৬০) বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি নারী সাংবাদিক সুবর্ণা নদী হত্যা মামলার প্রধান আসামি।
দুদক পাবনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাবনা সদর থানায় মামলাটি করেন।
দুদকের দাবি, আবুল হোসেন ঘড়ির মেকানিক থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দখলে রেখে ভোগ করছেন। কিন্তু এসব সম্পদের উৎস দেখাতে পারেননি।
দুদক পাবনা কার্যালয় ও মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, আবুল হোসেন প্রথম জীবনে ঘড়ি ও রেডিওর মেকানিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের সূত্র ধরে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে।
অনুসন্ধানে ১৯৯৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তাঁর নিজ নামে ১৯টি দলিল ও স্থাবর-অস্থাবর মিলে ৪০ কোটি ৬৬ লাখ ১৪ হাজার টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ১৯ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার ঋণ রয়েছে। ঋণের অর্থ বাদ দিলে তাঁর দখলে ১১ কোটি ৫২ লাখ ৫৩ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তিনি আয়কর বিবরণীতে ৪ কোটি ৬৭ লাখ ২৪ হাজার টাকার হিসাব দিয়েছেন। এর মধ্যে মৎস্য খাত থেকে আয় বাবদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। এ আয়ের পক্ষেও তেমন কোনো কাগজপত্র দেননি। ফলে পুরোটাই জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে প্রমাণিত হয়, যা তিনি ভোগদখলে রেখেছেন।
দুদক গত ৮ আগস্ট তাঁকে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ দেয়। তিনি নিজে স্বাক্ষর করে নোটিশ গ্রহণ করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে ব্যর্থ হন। ফলে মামলাটি করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মামলাটি গ্রহণ করেছি। এখন দুদকের একজন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করবেন।’
আবুল হোসেন পাবনার নারী সাংবাদিক সুবর্ণা নদীর সাবেক শ্বশুর। গত ২৮ আগস্ট রাত ১০টার দিকে বাড়িতে ঢোকার সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত সুবর্ণাকে কুপিয়ে হত্যা করে। অভিযোগ ওঠে, বিবাহবিচ্ছেদ ও যৌতুক দাবির একটি মামলা নিয়ে সাবেক শ্বশুর ও স্বামীর সঙ্গে সুবর্ণার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই তাঁকে হত্যা করা হয়। সুবর্ণার মা মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে শ্বশুর, স্বামীসহ তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার পরই পুলিশ আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি এখন কারাগারে।