ওসমান পরিবারে গৃহবিবাদ

>
  • নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বর্তমান সাংসদ জাপার সেলিম ওসমান
  • এবার মাঠে নেমেছেন প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন
  • গত দুটি নির্বাচনে আ. লীগ আসনটি মহাজোট প্রার্থীকে ছেড়ে দেয়
  • এবার আসন ছাড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ
  • আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচারে নেমেছেন
পারভীন ওসমান  ও সেলিম ওসমান
পারভীন ওসমান ও সেলিম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে ওসমান পরিবারের গৃহবিবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। এখানে জাতীয় পার্টির প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে উপনির্বাচনে একই দল থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সেলিম ওসমান। কিন্তু এখন প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান। তিনি সেলিমের ভাবি।

পারভীন ওসমান ইতিমধ্যে প্রচারণা ও মতবিনিময় শুরু করে দিয়েছেন। এদিকে গত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনটি মহাজোট প্রার্থীর জন্য ছেড়ে দিলেও এবার ছাড়তে নারাজ। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।

বর্তমান সাংসদ ও ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান কীভাবে এ পরিস্থিতি সামাল দেবেন, তা নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনা চলছে। গত শুক্রবার কর্মী-সমর্থক নিয়ে নগরীর মাসদাইর কবরস্থানে প্রয়াত স্বামী নাসিম ওসমানের কবর জিয়ারত করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামেন পারভীন ওসমান। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা গেছে বড় ছেলে আজমেরী ওসমানকে।

পারভীন ওসমান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁকে দলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কারও বিরোধিতা করার জন্য নয়, আমি দলের চেয়ারপারসনের পক্ষে কাজ করতে নেমেছি।’ সর্বশেষ গত সোমবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের এক মতবিনিময় সভায় পারভীন ঘোষণা দেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি মাঠে নেমেছেন। আগামী নির্বাচনে দল তাঁকেই মনোনয়ন দেবে।

১৯৮৬,১৯৮৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে সাংসদ হন প্রয়াত নাসিম ওসমান।’ ৯১ সালে বিএনপির আবুল কালামের কাছে হেরে যান তিনি। এরপর’ ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের এস এম আকরাম এবং ২০০১ সালে আবার বিএনপির আবুল কালামের কাছে হেরে যান নাসিম ওসমান।

জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি নাসিম ওসমানের হাতে গড়া। তিনি চারবার সাংসদ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে উপনির্বাচনে ছোট ভাই সেলিম ওসমান সাংসদ হন। নেতা-কর্মীদের আপদে-বিপদে তিনি পাশে থাকতেন। কিন্তু সেলিম ওসমানের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের দূরত্ব অনেক। তা ছাড়া শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় সেলিম ওসমান সব মহলে বেশ সমালোচিত হয়েছেন। এ কারণে জাপার একটি অংশ এবার পারভীন ওসমানকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়।

তবে ভাবি পারভীন ওসমানের মাঠে নামার ঘোষণাকে ভালোভাবে নেননি সেলিম ওসমান। তিনি তাঁর অনুগত নেতা-কর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় মতবিনিময় সভা করেছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে সেলিম ওসমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবু জাহের প্রথম আলোকে অবশ্য বলেন, নাসিম ওসমানের অনুপস্থিতিতে সেলিম ওসমানের সঙ্গে আছি। দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তাঁর সঙ্গে কাজ করব।’

পারভীন ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি মানেই নাসিম ওসমান। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের নেতা-কর্মীরা আমার জন্য কাজ করবেন।’ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় কোনো চাপে আছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কে চাপ দিল, না দিল সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। নাসিম ওসমান আমাকে বলে গেছে, আমার অনুপস্থিতিতে তুমি দলের হাল ধরবে এবং রাজনীতি করবে। এ কারণে আমি কাজ শুরু করেছি।’

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাংসদ শামীম ওসমানের একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আরজু রহমান ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ বাদল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল কাদির, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ।