কিডনি বিকল হয়ে ঘণ্টায় পাঁচ মৃত্যু

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মুহাম্মদ রফিকুল আলম।  ছবি: প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মুহাম্মদ রফিকুল আলম। ছবি: প্রথম আলো

কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষ প্রায় দুই কোটি। ঘণ্টায় পাঁচজন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে কিডনি বিকল হয়ে। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মানুষের সচেতনতা বাড়িয়ে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য: প্রয়োজন সচেতনতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য দেন। প্রথম আলো আয়োজিত এই বৈঠক আয়োজনে সহায়তা করে বেসরকারি বিআরবি হাসপাতাল।

মূল উপস্থাপনায় বিআরবি হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এ সামাদ বলেন, বছরে প্রায় ৪০ হাজার রোগী কিডনি বিকল হয়ে মারা যাচ্ছে। ডায়ালাইসিস প্রয়োজন আছে এমন রোগীদের মাত্র ২০ শতাংশ এই চিকিৎসা নিতে পারে। ডায়ালাইসিস শুরু করার পর ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ তা বন্ধ করে দেয় অর্থের অভাবে। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ কিডনি রোগীর মৃত্যু হচ্ছে প্রায়বিনা চিকিৎসায়।

অধ্যাপক সামাদ বলেন, ‘মানুষের দুটো কিডনি ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২০০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে। কিডনি আমাদের শরীরকে বিষমুক্ত করে। তিনিসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক বিশেষজ্ঞ বলেন, ওজন, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তাঁরা বলেন, রাস্তাঘাটের খাবার হঠাৎ কিডনি পরিস্থিতি খারাপ করে ফেলতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আছিয়া খাতুন বলেন, কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য শিশুদের শাকসবজি খাওয়া, চার ঘণ্টা পরপর প্রস্রাব করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, কিডনি রোগের আলোচনায় নারীর স্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে। কিডনি রোগ থাকা কোনো নারী গর্ভধারণ করলে রোগের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায় এবং গর্ভের সন্তানের ঝুঁকি থাকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের কিডনি রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বেশি পানি খেলে কিডনি ভালো থাকে, এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। পানি বেশি খেলে প্রস্রাব বেশি হয়, কিডনির ওপর চাপ পড়ে। অন্যদিকে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। দেশে চিকিৎসকের ঘাটতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতি জেলায় সরকারি হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগ চালু করা এবং ২০-২৫টি করে ডায়ালাইসিস যন্ত্র দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমের সঞ্চালনায় বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, মানুষের অভ্যাস বদলানো কঠিন। নিজের মায়ের কিডনি রোগের কথা উল্লেখ করে এই ক্রীড়াবিদ বলেন, ‘সচেতনতা আমার ও আমার বন্ধুদের কাজে দিয়েছে। সাকিব, মুশফিক—এরা এসব ব্যাপারে আন্তরিক।’ ইত্তেফাক-এর প্রধান প্রতিবেদক আবুল খায়ের বলেন, কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা রোগী দেখার সময়ের কিছু ব্যয় করতে পারেন মানুষকে সচেতন করার কাজে।

ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক এম এ সালাম বলেন, নীরব ঘাতক হচ্ছে কিডনি রোগ। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস—এই দুটি রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে কিডনি অনেকাংশে সুস্থ রাখা সম্ভব।

বিআরবি হাসপাতালের উপপরিচালক অধ্যাপক এম এ রহমান বলেন, অনেকে মনে করেন, শিশুদের কিডনি রোগ হয় না। এই ধারণা ভুল। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কিডনির জন্য বিপজ্জনক। একই প্রতিষ্ঠানের হেড অব ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন এ কে এম শাহরিয়ার বলেন, ১৫ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর সেবা সপ্তাহ পালন করছে বিআরবি হাসপাতাল। ৫০০ টাকায় কিডনি রোগের সব ধরনের পরীক্ষা করানো হচ্ছে।