ছেলেকে বহনকারী মাইক্রোর চাপায় বাবার মৃত্যু

ওয়াহিদুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো
ওয়াহিদুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো

ছেলেকে বহন করা মাইক্রোবাসটি হঠাৎ বিকল। বাবাকে ফোনে সমস্যা জানালেন ছেলে। মোটরসাইকেল নিয়ে বাবা গেলেন ছেলেকে সমস্যা থেকে উদ্ধারে। কিন্তু ঘটে গেল বিয়োগান্ত ঘটনা। ওই মাইক্রোবাসের নিচে চাপা পড়ে চিরবিদায় নিলেন বাবা। গতকাল মঙ্গলবার মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বীরমোহন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ওয়াহিদুর রহমানের ছেলে বায়জিদ হাওলাদার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গতকাল একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাইক্রোবাসে করে মাদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন বায়জিদ। গ্রামের কাছাকাছি এসে মাইক্রোবাসটি বিকল হয়ে পড়লে বাবা ওয়াহিদুর রহমানকে মোবাইলে ফোন দেন তিনি। বাবা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে আসেন ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যেতে। মাইক্রোবাসের সামনে মোটরসাইকেল থামিয়ে দাঁড়ান তিনি। এ সময় মাইক্রোবাসের চালক গাড়ির পেছনে কাজ করছিলেন। চালকের আসনে বসেন আরেক যাত্রী মুনিরুজ্জামান। হঠাৎ মাইক্রোবাসটি চালু করে ফেলেন তিনি। মাইক্রোবাসটি চলতে শুরু করলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াহিদুর রহমান এর নিচে চাপা পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় ওয়াহিদুরকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ওয়াহিদুর রহমান (৪৮) বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সূত্রে জানা যায়, বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে একটি সভায় অংশ নিতে গতকাল ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে সেখানে যাচ্ছিলেন ওই স্কুলের সভাপতি মুনিরুজ্জামান এবং ওয়াহিদুর রহমানের ছেলে বায়জিদ হাওলাদার। রাত নয়টার দিকে বীরমোহন এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ মাইক্রোবাসটির বিকল হয়ে পড়ে। এ সময় বায়জিদ তাঁর বাবা ওয়াহিদুর রহমানকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। ওয়াহিদুর মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। কিছুক্ষণ পরে মাইক্রোবাসের চালক গাড়ির পেছনে গেলে চালকের আসনে বসেন মুনিরুজ্জামান। তাঁর হাতে হঠাৎ মাইক্রোবাসটি চলতে শুরু করলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াহিদুর রহমানকে চাপা দেয় এটি।

চোখের সামনে বাবার এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বায়জিদ। তিনি বলেন, ‘বাবা আমার জন্য অনুপ্রেরণা ছিলেন। আজ আমার চোখের সামনে এভাবে মারা গেলেন তিনি। আমার পড়ালেখা নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। সব শেষ হয়ে গেল।’

ডাসার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর শুনেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় আমরা। মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালকের আসনে যিনি ছিলেন, তাঁর লাইসেন্স ছিল কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’