এই সরকারের একদিন বিচার হবে: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলটির প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন। ফাইল ছবি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলটির প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন। ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারের একদিন বিচার হবে। সরকার বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে, এ জন্যই সরকারের বিচার হবে।

ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বুধবার বিকেলে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বহুদলীয় মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার পার্লামেন্টকে ধ্বংস করেছে ১৫৪ জন অনির্বাচিত সংসদ সদস্য দিয়ে, বিচার বিভাগ-প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। গণমাধ্যমকে জবরদস্তি করে দখল করে রেখেছে। সরকারের মতো করে, সরকারের হুকুমে চলে এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে রেখেছে। এসব কারণে সরকারের বিচার হবে।

আবারও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের দেশকে আপনাদের রক্ষা করতে হবে। এই মানুষদের আপনাদের রক্ষা করতে হবে, অন্য কেউ উড়ে এসে আপনাদের রক্ষা করবে না। তাই ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সমস্ত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই “দানব” সরকারকে সরিয়ে দিয়ে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপির ‘২ লাখ ৩৩’ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ‘সাড়ে চার হাজার’ মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে যাঁরা কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত নন, এমন মানুষের নামেও মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি থানায়-থানায়, ওয়ার্ড বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কখন করে এটা? যখন সরকার ভয়ে ভীত, সন্ত্রস্ত। সামনে নির্বাচন, এই নির্বাচনে যদি ২০-দলীয় জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে সরকারের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এ কারণে সরকার চায় বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে।’

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন আমরা নির্বাচনে যাব কি না? সংবিধান অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর নির্বাচনের কথা বলা আছে। সেই নির্বাচন তো আপনারা শেষ করে দিয়েছেন। সব দলের সমান অংশগ্রহণ নেই, ওরা (আওয়ামী লীগ) ছাড়া আর কেউ নেই। আমরা অবশ্যই নির্বাচনে যেতে চাই। কিন্তু কোন নির্বাচন? যে নির্বাচনে লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড (সমান সুযোগ) তৈরি হবে, এমন নির্বাচনে।’

ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জোর করে, মামলা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। যখন জনগণ থেকে কোনো সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন অত্যাচার-নির্যাতনের পথ বেছে নেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফেরাউন, নমরুদ, হিটলার, মুসোলিনি, এরশাদ এবং আপনাদের অন্যায়-অত্যাচার আমরা দেখেছি। এভাবে জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখা যায় না।’

খালেদা জিয়ার কারাবাস সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কেন আটক করে রেখেছে? খালেদা জিয়া যদি বাইরে থাকেন, মুক্ত হয়ে যদি বাইরে আসেন ও জনগণকে যদি আহ্বান করেন, তাহলে হাজার-হাজার, লাখ-কোটি জনতা এই সরকারকে ধুলার মতো উড়িয়ে দেবে। এ কারণেই সরকার খালেদা জিয়াকে “আটক” করে রেখেছে, তাঁর চিকিৎসা “দিচ্ছে না”।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমরা জানি, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছু হয় না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা এর সুষ্ঠু বিচার করবেন এবং সেই বিচার তিনি করবেন অবশ্যই। জনগণ কখনো অন্যায়কে সহ্য করে না। জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেই।’

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নূর হোসেন কাসেমী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।